নেতৃত্বের সংকট বিএনপির সকল পর্যায়ে। শীর্ষ দুই নেতার একজন সাজা ভুগছেন, আরেকজন বিদেশে পলাতক। অপর কেন্দ্রীয় নেতাদের মুরোদ নেই দেখে নির্বাচনে যেতে পারছে না দল, কে হবে প্রধানমন্ত্রী- সেই প্রশ্নের নেই মীমাংসা।
এদিকে মাঠের আন্দোলনে ব্যর্থতার দায়ভার একজন অপরজনের কাঁধে চাপাতে ব্যস্ত। কর্মসূচির ডাক দিলে দফা ঘোষণা করতে ভুলে যান কেন্দ্রীয় নেতারা। রাজপথে সরকার পতনের আন্দোলন করতে গিয়ে সরকারের অনুমতি নেন নেতারা, আবার পুলিশ দেখে রাস্তায় জ্ঞান হারিয়ে আবার পুলিশের গাড়িতে চড়েই পুলিশের কার্যালয়ে গিয়ে পাঁচ তারকা হোটেলের খাবার খেয়ে পরদিন মিডিয়ার সামনে অস্বীকার করে জাতির সামনে হাসির পাত্রে পরিণত হন, কেউ হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে স্মৃতিভ্রষ্টের নাটক করেন! এই হলো বিএনপি।
আরও পড়ুন : বিএনপির গণশত্রুতে পরিণত হলেন গয়েশ্বর ও আমান
বিএনপির রাজনীতির দেউলিয়াত্বের আরেক প্রমাণ মিলল আজ সন্ধ্যায়। ২৯শে জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায় চাপিয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয়েছেন প্রায় ৫০ বছর বয়সী রাশেদ ইকবাল খান।
মঙ্গলবার (৮ই আগস্ট) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমান সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের অসুস্থতার কারণে তার পরিবর্তে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন রাশেদ ইকবাল। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। যদিও জানা গেছে, শ্রাবণ অসুস্থ নন। তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কৌশলগত কারণে সরাসরি তাকে বহিষ্কার করা হয়নি।
রাশেদ বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে জানা গেছে, রাশেদের ২৭ বছর বয়সী পুত্র সন্তান ও ৮ মাস বয়সী নাতনীও রয়েছে। এমন বয়ঃবৃদ্ধ একজন নেতা এখনো ছাত্রদলের পদ-পদবী আঁকড়ে রয়েছেন, যা সত্যিই বিস্ময়কর।
আরও পড়ুন : জানা গেল বিএনপির ৭১ ও সময় টিভিকে বর্জন করার রহস্য!
দলীয় সূত্রের দাবি, কর্মসূচিতে শ্রাবণের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নয় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দল থেকে দেওয়া দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেননি বলে মনে করছেন সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা। যে কারণে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকায় কর্মসূচিতে বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় শ্রাবণের সম্পৃক্ততা থাকায় তাকে সুকৌশলে দলীয় পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
কারণ কানাডার আদালতে ইতিমধ্যে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ৫ম বারের মত রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ মুহূর্তে বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় শ্রাবণসহ অপর পদস্থ নেতাদের সম্পৃক্ততা বিএনপিকে আরও বিপাকে ফেলতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। তাই শ্রাবণ আর বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত নন, এমনটাই প্রমাণ করতে চাইছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
তবে চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনা ফাঁস হয়েছে। দলীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৯শে জুলাইর কর্মসূচির পর রাতে এক জুম মিটিংয়ে শ্রাবণ কর্মসূচির ব্যর্থতার কারণ হিসেবে ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সাথে আলোচনায় লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের নেতৃত্বগুণের অভাবসহ কিছু বেফাঁস কথা বলে ফেলেন।
“কর্মীরা ধুঁকছেন পল্টনে, নেতা আরাম করছেন লন্ডনে- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহুল প্রচারিত এই উক্তিটিও সেই আলোচনায় তুলে শ্রাবণ বলেছেন লোকের সামনে মুখ দেখাতে পারিনা। তারেক রহমানের হুকুমে ধ্বংসাত্মক রাজনীতির ফল ভুগছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এই রাজনীতিতে কোনো ভবিষ্যত নাই। বিদেশি রাষ্ট্রগুলো এখন সরকারের পক্ষে কথা বলছে। এদিকে রাজনীতি করার কারণে বিদেশে যেতে পারছেন না ছাত্রদল-যুবদলের নেতারা। সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বিএনপি। সহিংসতা করতে গিয়ে মামলা মাথায় নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে। অথচ নেতা আরাম করে স্কাইপে বসে বিয়ারে চুমুক দিতে দিতে আমাদেরকে নির্দেশ দেন, দেশকে অচল করে ফেলতে হবে। এই রাজনীতি আমাদেরকে ধ্বংসের শেষপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। মানুষ এখন বিএনপির নাম শুনলে রেগে যায়।”
[এক্সক্লুসিভ : তারেক জিয়ার নেতৃত্বের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনার খেসারতে পদ খোয়ালেন শ্রাবণ]
শ্রাবণের এই কথাগুলো তারেক রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কর্মীরা স্ক্রিন রেকর্ড করে পাঠিয়ে দিয়েছে লন্ডনে। মূলত এতেই শ্রাবণের রাজনীতির ইতি ঘটেছে বলে জানান বিএনপির কার্যালয়ের ঘনিষ্ঠ ওই সূত্র।
আরও পড়ুন :