উইকিলিকস-এর বরাতে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিএনপি এবং তারেক রহমান- দুটোই ঘৃণ্য নাম হিসেবে বিবেচিত। উইকিলিকস-এর বাংলাদেশ অধ্যায় নিয়ে ফাঁসকৃত হাজারো মার্কিন নথির পাতায় পাতায় উঠে এসেছে তারেক রহমানের কুকীর্তির খতিয়ান। কুখ্যাত মাফিয়া সর্দার হিসেবে যত ধরণের অপরাধ ঘটানো সম্ভব, তারচেয়েও বেশি রয়েছে তারেক রহমানের নামের পাশে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হওয়া মামলাগুলোয় ইতিমধ্যে তারেকের সাজা ঘোষণা করেছেন বিজ্ঞ আদালত। এমন এক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত থাকতে পারেন না। বিএনপির গঠনতন্ত্রও তাই বলে (পড়ুন: বলতো)। তারেকের পদ টিকিয়ে রাখতে এবং তাকে দলের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী করতে গঠনতন্ত্র পর্যন্ত বদলে ফেলা হয়। দলে যোগ্য এবং জিয়াউর রহমানের সাথে রাজনীতি করা প্রবীণ রাজনীতিবিদ থাকা সত্ত্বেও কোনো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা না থাকা খুনি তারেককে দলীয় প্রধান হিসেবে প্রমোশন দেয়া হয়। একটা গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলের জন্য এটা লজ্জাজনক এবং জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
দলে টিকে থাকতে পারলেও সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় বাংলাদেশের আইন অনুসারে তারেক রহমান নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঠিকই। কিন্তু বিদেশে পলাতক থেকে সহিংসতা এবং ধ্বংসাত্মক রাজনীতি পরিচালনা করছেন তিনি। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনামহানি ঘটানো, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার গতিপথ বাধাগ্রস্ত করা, দেশে অরাজকতা, অস্থিতিশীলতা সৃিষ্টর মাধ্যমে জনগণের জানমালের ক্ষতি করা, গুজব, মিথ্যাচার ও অপপ্রচার ছড়িয়ে দেশে প্যানিক সৃষ্টি করা ছাড়াও তার অনুগত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অর্থনীতিকে ধ্বংস করা এবং নেতা-কর্মীদের দিয়ে দেশকে পুনরায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের জনপদ হিসেবে গড়ার সকল অপচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
শুধু তো দেশ ও জনগণের ক্ষতি করছেন না তিনি- একইসাথে নষ্ট করছেন দলের ভাবমূর্তি, তার নির্দেশ মানতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন কর্মীরাও। নিজে লন্ডনে পলাতক থেকে গা বাঁচিয়ে চলছেন, অন্যদিকে তার কর্মী-সমর্থক এবং নেতাদের অপরাজনীতির চর্চায় ক্রমশ বিএনপিকে ঘৃণা করতে শুরু করেছে শান্তিপ্রিয় দেশবাসী। মানুষ এখন বিএনপির নাম শুনলে বিরক্ত হয়, স্থিতিশীলতা বিনষ্টের শঙ্কায় ভোগেন।
বিএনপিকে জনগণ আদৌ কোনো রাজনৈতিক দল বলেও মনে করেনা এখন। কারণ নির্বাচন নিয়ে তাদের তামাশা জনগণ বুঝতে পারছে। রাজনীতি ও নির্বাচনের নামে মনোনয়ন বাণিজ্য ছাড়া তারেক রহমানের দ্বিতীয় কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করেননা সাধারণ জনগণ।
নির্বাচনে অংশ নিলে ভরাডুবি ঘটবে এটা বিএনপি ভালো করে জানে, তাই নতুন নতুন তামাশা সৃষ্টি করছে। আবার নির্বাচনে না গেলে কর্মী-সমর্থকদের আস্থা চিরতরে হারাবে, সেটাও জানেন তারেক। তাই নানারকম তালবাহানায় নির্বাচন ভণ্ডুলের পাঁয়তারা করে সব দায় সরকারের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন তিনি। এদিকে দলের শীর্ষ নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে সিঙ্গাপুর-ব্যাংককে গিয়ে উঠেছেন। এমন অবস্থায় বিএনপির আন্দোলনও বড়সড় হোঁচট খেয়েছে। দিক-নির্দেশনাহীন একটা দলের ভবিষ্যত এমনই হবার কথা।
[তারেক রহমানের দুষ্টচক্রে বন্দী বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, ফেরার পথ বন্ধ]
বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকেবহাল, এমন দেশগুলো বিএনপিকে নির্বাচনে দেখতে চায়। কিন্তু চাইলে কী হবে, তারাও জানেন বিএনপির মূল সমস্যা তারেক রহমান। ইতিমধ্যে বিএনপির সহিংস কর্মসূচি দেখে কূটনীতিকরাও আঁচ করে নিয়েছেন, তারেক জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের নামে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চান। যে কারণে সংবিধান বহির্ভূত আবদার তথা- এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আন্দোলনের নামে বিএনপি আবারও ২০১৩-২০১৫ সালের মত দেশজুড়ে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাতে পারে— এমন শঙ্কা তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যে।
বিএনপির পদযাত্রা, কালো পতাকা মিছিল, অনশন, ইত্যাদি নানারকম কর্মসূচির আড়ালে ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে, রক্ত ঝরেছে, আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর, নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা এবং খুন-জখমের ঘটনা ঘটিয়েছে বিএনপি। একইসাথে বিএনপির মিছিল-সমাবেশে অনেক চিহ্নিত এবং পলাতক সন্ত্রাসীকে দেখা গেছে। ইতিমধ্যে অবৈধ অস্ত্রও উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সবমিলে দলীয় কর্মীদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তারেক রহমান দেশজুড়ে একটা ভয়াবহ ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করতে চাইছেন বিদেশে বসে। অথচ সাধারণ নেতা-কর্মীদের অনেকেই চান শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে।
বিনপির বিভিন্ন স্তরের সিনিয়র নেতারা বলছেন, তারেক রহমানের উদ্ভট কর্মসূচি নিয়ে বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রগুলো বিরক্ত। কারণ, কর্মসূচিগুলো শেষপর্যন্ত শান্তিপূর্ণ থাকছে না। ফলে তারাও বিএনপির ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। সর্বশেষ আশুলিয়ায় বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত থাকার ভিডিও ফুটেজ ফাঁস হওয়ায় বিদেশি কূটনীতিকরা বিএনপির পক্ষ নিয়ে সরকারের সাথে দেন-দরবার চালাতে চাইছেন না। বিএনপির পক্ষ নিলে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কূটনীতিকদের এখন আর কথা শোনাতে ছাড়েন না। কূটনীতিকরাও জানেন বিএনপি চলছে তারেকের একক নির্দেশে। দেশে সহিংসতা যা ঘটছে, সবই তার নির্দেশে হচ্ছে। ফলে বিগত কয়েকমাস আগেও যেমন মনে হচ্ছিলো বিএনপি আন্তর্জাতিক মহলে কিছুটা হলেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, সবই নস্যাৎ হয়ে গেল সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলোতে সহিংসতার ঘটনায়।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে জার্মানিসহ ইউরোপের দুটি দেশের দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তারা বিএনপি নেতা আব্দুল মঈন খানের বাসায় নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন। সেখানে তারা তারেকের রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। মঈন খান এবং আমীর খসরুর উপস্থিতিতে তারেককে আপাতত নেতৃত্বের বাইরে রাখা যায় কি না- ভেবে দেখার অনুরোধ জানান তারা। সেইসাথে বয়ঃজ্যেষ্ঠ হিসেবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের হাতে দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব তুলে দেয়ার ব্যাপারে দলীয় ফোরামে আলোচনার ইঙ্গিতও দেন। কিন্তু মির্জা ফখরুল অতিথিদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এসই অবান্তর চিন্তা।
তারেক রহমান না থাকলে বিএনপি থাকবে না। তারেকহীন বিএনপির কথা ভাবাও যায় না। আর দলের কেউ তারেককে মাইনাস করতে চাইছেন- এমন খবর লন্ডনে পৌঁছালে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে যাবে। রাজনীতির নাম ভুলে যেতে হবে। তারেক কাউকেই ছাড়বেন না। তারেকের এহেন প্রতিহিংসাপরায়ণতার কথা শুনে কূটনীতিকরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে এও জানালেন, এভাবে চলতে থাকলে বিএনপি অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এমন ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবেনা। ফেসবুক-ইউটিউবে বক্তৃতা দিয়ে তারেকও নিজের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে পারবে না।
[তারেক রহমানের দুষ্টচক্রে বন্দী বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, ফেরার পথ বন্ধ]
সবচেয়ে গুরুতর ব্যাপার হলো, দলের তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা এই অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে এখন বুঝে গেছেন তারা বিএনপিতে ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন। তাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে মৌজ-মাস্তি করছেন তারেক। কর্মীদের চাঁদার টাকায় লন্ডনে বিলাসী জীবনযাপন করছেন তিনি। যতই টিকটকে ‘তারেক আসবে বীরের বেশে’ কনটেন্ট বানানো হোক না কেন, তারেক যে দেশে আসবেন না আর, সেটা সবাই জানেন।
নির্বাচন এলেই হৈ-হুল্লোড় করে নমিনেশন বাণিজ্য করবেন তারেক, সেই টাকা লন্ডনে চলে যাবে। পরবর্তী ৫ বছর তারেক সেই টাকায় দামি দামি গাড়ি কিনবেন, জুয়া খেলবেন, মদ গিলবেন, নারী নিয়ে ফূর্তি করবেন। এভাবেই চলবে তার জীবন। অন্যদিকে তারেকের নির্দেশে ভূতের বেগার খাটতে গিয়ে মামলা খেয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে কর্মীদের। এটা কোনো রাজনীতি হতে পারেনা। বিএনপিকে তারেক তার অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে দেখে। কল্যাণমূলক রাজনীতি বলে কিছুই নাই এখানে। কেন্দ্রীয় নেতারাও তারেকের রাজত্ব টিকিয়ে রাখার বিনিময়ে বখরা পাচ্ছেন। হতাশ-হতোদ্যম কর্মীদের ভাবনা এখন এমনই।
ত্যাগী ও পরীক্ষিত প্রবীণ নেতারা মনে করেন, সাময়িকভাবে হলেও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের জন্য তারেক রহমানকে বাইরে রেখে বিএনপিকে রাজনীতি করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তারেকের দুষ্টচক্র থেকে বিএনপি কি আদৌ বের হতে পারবে? কিংবা তারেক কি সেটা মেনে নেবে? এই নেতাদের মতে, বিএনপির বিশ্বাসযোগ্যতা, আন্তর্জাতিক আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে তারেকই একমাত্র বাধা।