রুমিন ফারহানা পেশায় ব্যারিস্টার। যদিও আদালতে তাকে মামলা নিয়ে লড়তে দেখা যায় না। তিনি বরং সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন টকশো কাঁপান। সমালোচনামূলক কথাবার্তা বলেন। নীতিবাক্যের ডালি মেলে বসেন। অন্যজন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ওরফে খাম্বা মামুন, মহা দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতির দায়ে প্রায় শতবর্ষের কারাদণ্ডে দণ্ডিত।
বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় তার যে দণ্ড, তা শেষ হতে কত বছর লাগবে সে হিসেব করতে আইনজীবীদের ঘর্মাক্ত হতে হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, হঠাৎ করে কারান্তরীণ মামুনের সঙ্গে রুমিনের বাগদানের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে রাজনৈতিক পাড়ায়। আলাপ-আলোচনায় চারপাশ সরগরম। এ নিয়ে আজ সারাদিন নানারকম কথা শোনা যাচ্ছে। বিএনপির কেউ এ নিয়ে মুখ খোলেননি মিডিয়ার সামনে।
একাধিক সূত্র বলছে, কারান্তরীণ মামুনের সঙ্গে রুমিনের বাগদান সম্পন্ন হয়েছে কিছুদিন আগেই। কারাগারে মামুনকে দেখতে গেছেন রুমিন একাধিকবার। মামলা নিয়ে আলাপ-আলোচনাও করেছেন তারা। এরইমধ্যে তাদের প্রেম এবং সর্বশেষ বাগদান সম্পন্ন হয়েছে। তবে এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহল অনুসন্ধান করছে এবং তথ্যানুন্ধানের চেষ্টা করছে।
খাম্বা মামুন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামুন হয়ে হয়ে যান ক্ষমতার অন্যতম ভাগীদার। বিভিন্ন টেন্ডার, সরকারি কেনাকাটা এমনকি বদলি ও পদোন্নতি বাণিজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা অর্থ উপার্জন করেন মামুন। হাওয়া ভবনের অকথিত সেনাপতি ছিলেন তারেক রহমানের এই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। শুধু হাওয়া ভবন নয়, রং মহল খোয়াব ভবনেরও অন্যতম কান্ডারি ছিলেন মামুন। ক্যান্টনমেন্টে মইনুল রোডে খালেদা জিয়ার তৎকালীন বাড়িতেও যাতায়াত ছিল মামুনের।
আরও পড়ুন : চাঁদাবাজি-ই হচ্ছে তারেক রহমানের আয়ের উৎস!
তারেক রহমানের সাথে মিলে বিদ্যুৎ বিভাগের ২০ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অন্যতম নায়ক এই মামুন। বিদ্যুতের খুঁটি সরবরাহের টেন্ডার পেতে খাম্বা লিমিটেড নামে একটি সাপ্লায়ার প্রতিষ্ঠান খোলেন মামুন। যার পার্টনার ছিলেন তারেক। দুজনে মিলে বিদ্যুতের খুঁটি সরবরাহ না করেই ভুয়া ভাউচারে লুটে নেন রাষ্ট্রের ২০ হাজার কোটি টাকা। এ কারণে তারেক রহমান চিহ্নিত হন খাম্বা জিয়া নামে এবং মামুন হয়ে যান খাম্বা মামুন নামে।
এক-এগারো পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল ব্যবসা ও বড় বড় ঠিকাদারির মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন এই দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিবাজ। তারেক রহমানের ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে ইচ্ছেমতো শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেল করে হাজার হাজার কোটি টাকা বানিয়েছেন। এমনকি ভারতের টাটা কোম্পানি বিনিয়োগ ফিরিয়ে নিয়েছিল বাংলাদেশ থেকে তারেক-মামুনের কমিশনের দাবির কারণে। এক-এগারোর সময় গ্রেপ্তার করা হয় মামুনকে। তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানা যায়, তারেক রহমানের যোগসাজশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে পাচারের কথা স্বীকারও করেছিলেন তিনি। একাধিক দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে তিনি এখন কারান্তরীণ রয়েছেন।
আরও পড়ুন : তারেকের প্রেমের টানেই রাজনীতিতে এসেছেন রুমিন ফারহানা
অন্যদিকে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বিএনপির রাজনীতিতে আলোচনায় আসেন ২০১০-এর পর থেকে। এসময় তিনি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে টকশোর মাধ্যমে আলোচিত হন। একসময় তারেক রহমানের নজরে পড়েন। তারপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিএনপির অনেক সিনিয়র নারী নেত্রীকে ডিঙিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন দলের মধ্যমণি। তারেকের নির্দেশে তাকে সংরক্ষিত কোটায় সংসদে পাঠানো হয় সরকারের সমালোচনার নামে চিৎকার চেঁচামেচির জন্য। টকশোর সুবাদে আলোচিত ও পরিচিত হলেও সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা শূন্য রুমিন ফারহানার। নিজ নির্বাচনী এলাকাতেও তিনি উপেক্ষিত। নারী কোটায় সাংসদ থেকে পদত্যাগের পর টকশোর মাধ্যমে তিনি এখনো আলোচিত। কিছুদিন আগেও তিনি বিভিন্ন দূতাবাসে যেতেন বিএনপির প্রতিনিধি হিসাবে।
আরও পড়ুন : বিএনপিতে শামা ওবায়েদের প্রভাব কমাতেই একের পর এক ভিডিও ফাঁস করছে রুমিন ফারহানা
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেখানেও তার আর ডাক পড়ছে না। আর রাজনীতিতে তিনি টিকে আছেন শুধুমাত্র তারেকের বদান্যতায়। এটা অনেকে মনে করেন। তারেকের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে তারই পছন্দের নেত্রীর ঘনিষ্ঠতার খবর পাওয়া যায় ৩ মাস আগে থেকেই। তারপর এই ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। একাধিক সূত্রের দাবি, তাদের বাগদান সম্পন্ন হয়েছে।
[রুমিন ফারহানা – খাম্বা মামুনের বাগদান নিয়ে বিএনপিতে গুঞ্জন!]
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, জেলে থাকা অবস্থায় কীভাবে বাগদান সম্পন্ন হল। এ নিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে বিভিন্ন মহল। তবে এটুকু বিএনপির অনেক নেতাই স্বীকার করেন, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ওরফে খাম্বা মামুনের সঙ্গে রুমিন ফারহানার সম্পর্ক স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি গভীর। প্রায়শ তিনি মামুনের আইনজীবী হিসেবেই দেখা করতে যান কাগারারে এবং দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতেন। যদিও মামুনের কোনো মামলারই এখন তারিখ নেই, তবুও কী জন্য রুমিন সেখানে যাতায়াত করতেন, সেটাও এক রহস্য।
আরও পড়ুন :