ব্যাকডেটে ভুঁইফোড় সংস্থার ‘মাদারে গণতন্ত্র’ পদক নিয়ে বিএনপির মিথ্যা বগল-বাদন
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের প্রতি অসামান্য (!) অবদানের জন্য ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি অ্যাওয়ার্ড’ বা মাদারে গণতন্ত্র সম্মাননা দিয়েছে দ্য কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও)। এমন এক দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, খালেদা জিয়া ক্ষুদ্র একটি সংগঠনের এতবড় দুটি সম্মাননা পেয়েছেন, তা বিএনপি নেতারা টের পেলেন ৩/৪ বছর পর!
আজ মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভুয়া ক্রেস্ট ও সনদপত্র সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও) নামক ভুঁইফোড় সংস্থাটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি। আঁতিপাতি করে খুঁজেও সংস্থাটির ওয়েবসাইটে খালেদা জিয়া বিষয়ক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, কানাডিয়ান হাইকমিশনও এখানে এটি এন্ডোর্স করেছে।
কিন্তু কানাডিয়ান হাইকমিশন এখনও সংবাদ মাধ্যমকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। সাধারণত এ ধরনের কোনো সম্মাননা দেয়া হলে সংবাদ মাধ্যমে তা জানানো হয়। তাদের কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে পদক, সনদ বা কোনো স্মারক তুলে দেওয়ার একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, অতি ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও।
তাই এই পদকপ্রাপ্তিকে বিএনপির রাজনীতির একটি কূটকৌশল হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, এর মাধ্যমে বিএনপি তাদের দলের নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের জন্য উৎসাহিত করার কৌশল হিসেবে এটা প্রচার করছে।
আরও পড়ুনঃ
৩ বছর আগে কানাডিয়ান ১ লক্ষ ৬০ হাজার ডলারের বিনিময়ে খালেদা জিয়ার জন্য বিএনপির পুরস্কার কেনার খবর ফাঁস
মির্জা ফখরুলের উপস্থাপিত সম্মাননার একটিতে তারিখ উল্লেখ রয়েছে ৩১শে জানুয়ারি ২০১৯, আরেকটিতে ৩১শে জুলাই ২০১৮। আরও কিছু কপিতে দেখা গেছে, যেখানে তারিখ দেয়া হয়েছে ৩১শে জুলাই ২০১৯ এবং ২৯শে মে ২০১৯।
এসব দেখে অনেকেই মজা করে বলছেন, খালেদা জিয়ার কয়েকটি জন্মদিন থাকার কারণে সম্মাননাও হয়ত কয়েক কিস্তিতে দেয়া হয়েছে।
তবে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, একই পদকের কেন এতগুলো তারিখ? তাছাড়া গত ৩/৪ বছর বিএনপি কেন এসব সম্মাননার কথা প্রকাশ করলো না? নাকি ফটোশপ করার সময় সাল সংশোধন করার কথা স্মরণ ছিল না তাদের?
আরেকটি বিষয়, Chrio বা Cohuridela সংস্থাটি নিজেরাই সম্মাননা পাওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। তাদের ওয়েবসাইটে গেলেই তার প্রমাণ পাবেন। সম্মাননায় মুদ্রিত দুটি ওয়েবসাইটের একটির কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুনঃ
খালেদার মাদারে গণতন্ত্র (Mother of Democracy) সম্মাননা নিয়ে আবারো মিথ্যাচার করছে বিএনপি
সিএইচআরআইও-এর আন্তর্জাতিক মিশন মূলত পাকিস্থান ও সিরিয়া কেন্দ্রিক। এর ইমেরিটাস মেম্বার মালালা ইউসুফজাই। এই ভুঁইফোড় সংস্থাটির ওয়েবসাইটে খালেদা জিয়ার সম্মাননা প্রাপ্তির কোনো তথ্য মেলেনি।
বিএনপির এমন মিথ্যাচার নতুন নয়
এর আগে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতিসংঘের মহাসচিবের দরবারে বিচারের আর্জি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রওনা হন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় তোলা ছবি নিয়ে দেশের গণমাধ্যমে ব্যাপক বিবৃতি দেয় বিএনপি।
দাবি করা হয়, জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে একান্ত বৈঠক করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এবং সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে নালিশ করা হয়েছে, নির্বাচন বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা নিয়েও কথা বলেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব।
অথচ পরবর্তীতে জানা যায়, এ সবই মিথ্যা। জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে দেখা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তিনি সাক্ষাৎ পাননি। অতঃপর দলীয় নেতা-কর্মীদের সামনে মুখ রক্ষার্থে তিনি জাতিসংঘের বারান্দায় কয়েকটি ছবি তুলেই দেশে ফিরে এসেছেন।
আরও পড়ুনঃ
‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ সম্মাননা পেয়েছেন খালেদা, সাড়ে ৩ বছর পর জানাল বিএনপি
পাকিস্থানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় বিএনপির প্রতি প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর অবিশ্বাস সবসময়। ফলে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ভাতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বে ছিল ভাটার টান। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপি ভারতীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপির সাথে সুসম্পর্ক দেখাতে গিয়ে করেছে নির্লজ্জ মিথ্যাচার।
২০১৫ সালে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান প্রেস ব্রিফিংয়ে দাবি করেন, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন করে শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন। এছাড়াও বেশ কিছু বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেন।
দেশের সব সংবাদমাধ্যম খবরটি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এটি মিথ্যাচার বলে শুরুতেই দাবি করা হয়।
পরে বিষয়টি নিয়ে জল ঘোলা হলে বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যম সরাসরি বিজেপি নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলে অমিত শাহ স্বয়ং জানিয়ে দেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার কথা হয়নি। এটি নিছকই মিথ্যাচার। প্রকাশিত খবরটির কোনো ভিত্তি নেই।
সে সময় এই ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে ভারতীয় মিডিয়া বিএনপিকে নিয়ে এমন সব সংবাদ পরিবেশন করে, যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও ট্যাবলয়েডে এ নিয়ে ব্যাপক হাসি-ঠাট্টা করা হয়।
যদিও স্বাভাবিকভাবেই বিএনপির এসবে কিছুই যায়-আসেনি, জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা।