সাম্প্রতিক সময়ে সরকারবিরোধীতার রাজনীতি করে দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়েছেন যারা, তাদের মধ্যে অন্যতম রেজা কিবরিয়া। আওয়ামী লীগের সাবেক সফল অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার [Shah A M S Kibria] ছেলে হিসেবেই রাজনীতিতে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। যদিও পিতার নাম পুরোপুরি ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি, এমনটাই মত সাধারণ মানুষের।
শাহ এএমএস কিবরিয়ার পুত্র রেজা তার পিতার আদর্শের বিপরীতে গিয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি বিতর্কিত নুরুকে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গড়েছেন। পিতার আদর্শের বিপরীতে গিয়ে রাজনীতি করলেও অনেকেই ভেবেছিলেন, রেজা কিবরিয়া অপর রাজনীতিবিদদের মতো দুর্নীতিপরায়ণ হবেন না, সব বিষয়ে স্পষ্ট থাকবেন এবং দেশে নতুন ধারার রাজনীতি প্রচলন করবেন। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি।
তার আয়কর নথিতে গরমিল এবং কর ফাঁকির অভিযোগে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর [National Board of Revenue (NBR)]-এর বিভিন্ন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় রেজা কিবরিয়া সম্পত্তির যে হিসাব দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি তার বিপুল আয়ের তথ্য গোপন রেখেছিলেন বলে জানিয়েছে এনবিআর। ২০১৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় রেজা কিবরিয়ার দেয়া তথ্যানুসারে, ঢাকার পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমি, ধানমণ্ডিতে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জমির বিনিময়ে ১৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাটগুলো হস্তান্তর হয়নি। এছাড়া পৈতৃকসূত্রে গুলশানে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
কিন্তু এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, একাধিক ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন, বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেন এবং অর্ধ কোটি টাকার শেয়ার থাকলেও তিনি আয়কর নথিতে তা গোপন করেছেন।
এছাড়া বিদেশি অনুদান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ধানমন্ডি ও গুলশানের নিজ মালিকানাধীন সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত বিপুল আয় গোপন রেখে রেজা বরাবরই সর্বনিম্ন কর দেন। সম্পদ গোপন, মানি লন্ডারিং ও আয়কর ফাঁকির অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই নোটিশ জারি করা হয়।
[বিদেশি শক্তিতে জ্বলে ওঠার আগেই খেল খতম রেজা কিবরিয়ার?]
এনবিআরের দেওয়া তথ্যমতে, রেজা কিবরিয়া শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে বার্ষিক ৬ লাখ ৪৯ হাজার ১৯৫ টাকা এবং পরামর্শক খাত থেকে আয় করেন ৮৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪৮০ টাকা। তার নামে ব্যাংকে ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, স্টক এক্সচেঞ্জে ১৭ লাখ টাকা,
বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৪০ লাখ টাকা, গাড়ি অর্জনকালীন মূল্য ১০ লাখ টাকা, স্বর্ণসহ অন্যান্য মূল্যবান ধাতু অর্জনকালীন মূল্য ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী অর্জনকালীন মূল্য ২ লাখ টাকা, আসবাবপত্র অর্জনকালীন মূল্য ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
পাশাপাশি নির্বাচনের সময় হবিগঞ্জের [Habiganj] সবচেয়ে ধনী প্রার্থী রেজা কিবরিয়া শিরোনামে বেশ কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশ হয়।
ধানমন্ডিতে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহুতল ভবনের ১৪টি ফ্ল্যাট ২০১৯ সালে রেজা কিবরিয়ার নামে মালিকানা হস্তান্তর হয়। প্রতিটি ফ্লাটের সর্বনিম্ন ভাড়া ৮০ হাজার টাকা হিসাবে রেজা ১৪টি ফ্ল্যাট থেকে বছরে কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা ভাড়া আদায় করেন বলে ভাড়াটিয়ারা জানান।
এছাড়া ২০১৫ সাল থেকে ইনেট্রো হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত হিসেবে নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছেন। রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক, অংশীদার ও পরিচালক হিসেবে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন রেজা কিবরিয়া।
আরও পড়ুনঃ ড. রেজা কিবরিয়ার কর ফাঁকি, এনবিআরের নোটিশ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রেজা কিবরিয়ার কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু তিনি সেই প্রত্যাশার কোনো দাম দেননি, উল্টো রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত।
সাম্প্রতিক সময়ে তিনি মানবাধিকার, অন্যান্য ইস্যুতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, সেনাবাহিনীকে উসকে দিচ্ছেন, সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভক্ত সৃষ্টির কথা বলছেন এমনকি এ উসকে দেওয়ার কথা একটি সাক্ষাৎকারে স্বীকারও করেছেন।
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী হল সার্বভৌমত্ব ও ঐক্যের প্রতীক। সেই সেনাবাহিনীতে বিভক্তি সৃষ্টি রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ। সেই অপরাধ করার পরও সেটিকে তিনি জায়েজ করার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন ফোরামে তিনি ইংরেজিতে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং এর কারণ তিনি বলছেন যে আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে জানানোর জন্য এটি করছেন।
তার বিরুদ্ধে অনেকেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্যকে উসকে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। আবার এখন এনবিআর বলছে, রেজা কিবরিয়া সম্পত্তির তথ্য গোপন করেছে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত এবং যথাযথ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুনঃ