সদ্যঘোষিত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কমিটিতে এক শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক করার অভিযোগ উঠেছে। ওই শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম মফিজুর রহমান মামুন। তাকে পল্লবী থানার ৯১নং ওয়ার্ড (সাংগঠনিক ওয়ার্ড) কমিটির ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ৭১টি ওয়ার্ড (সাংগঠনিক ওয়ার্ডসহ) কমিটি ঘোষণা করে। মামুনকে পল্লবী থানার ৯১নং ওয়ার্ড (সাংগঠনিক ওয়ার্ড) কমিটির ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে।
গত শনিবার রাতে সংগঠনটির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা মো. জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক এসব কমিটির অনুমোদন করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মফিজুর রহমান মামুন পল্লবীর ধ ব্লকের মামুন হিসেবেই পরিচিত। বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন পিন্টুর হাত ধরেই এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন মামুন। ওই সময় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও খুন-খারাবিতে হাত পাকান মামুন।
আরও পড়ুনঃ পিলখানা হত্যা মামলায় বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর জামিন আবেদন খারিজ করেছেন হাইকোর্ট।
এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতিতে ‘দাগি অপরাধী’ হিসেবেই মিরপুরজুড়ে মামুনের নাম ছড়িয়ে পড়ে। ২০০১ সালে আপন ছোট ভাইকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পল্লবী থানা ঘেরাও করে আলোচনায় আসেন সন্ত্রাসী মামুন। এরপর শুরু হয় তার ফেরারি জীবন।
২০০১ সালে গ্রেপ্তার হয়ে কিছুদিন কারাভোগের পর ২০০৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যান। পাসপোর্ট জালিয়াতি ও অনুপ্রবেশের অভিযোগে তিনি ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হন।
ওই সময় ১০ বছর সাজাভোগ করেন। কারাভোগ শেষে ভারতে বসেই মামুন বিদেশে অবস্থানরত মিরপুরের অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহিম ও সাহাদাতের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন।
সর্বশেষ গত বছর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে পল্লবী এলাকা থেকে মামুনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। ওই সময় তার বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা, ১৫টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও ২টি মামলায় সাজা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুনঃ মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন গ্রেফতার
পল্লবীর মুসলিম বাজারের স্থানীয়রা জানান, মামুন মিরপুরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নেন। তার কিলার বাহিনীর সদস্যরা এ টাকা কালেকশন (সংগ্রহ) করে। মামুনের কিলার বাহিনীর সদস্যরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এরা পল্লবী এলাকার আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পল্লবী থানা বিএনপির সাবেক এক সিনিয়র নেতা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি বলেন, মামুন কিছুদিন আগেও যুবদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেখানে পদ-পদবী না পাওয়ায় বিএনপির ওয়ার্ড কমিটিতে ঠাঁই নিয়েছে সে। এমন একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে দলে রেখে কী লাভ?
[শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি, লন্ডনে টাকা দিয়ে কিনেছেন পদ]
সে তো ভারতে পালিয়ে থাকে। সে একজন ফেরারি আসামি। তার নামে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই। যা আছে সবই বিভিন্ন অপরাধমূলক মামলা। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দলের নাম ভাঙিয়ে আবারো সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবে। ভবিষ্যতে অপকর্ম করার জন্য টাকা দিয়ে এই পদ বাগিয়েছে সে।
পল্লবী থানা বিএনপির সদ্য সাবেক সভাপতি ও ২নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ওয়ার্ড কমিটিগুলো মহানগর থেকে দেওয়া হয়েছে। মহানগর নেতারা বলছেন এটা নাকি তাদের ঈমানি দায়িত্ব।
মামুন কে, তার বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। কাদেরকে কমিটিতে আনা হয়েছে- সেটা মহানগরই ভালো জানে। তারা কমিটি দিয়েছে, তারাই বলুক মামুন কে?
মামুন সম্পর্কে পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, ‘মামুন একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।’
আরও পড়ুনঃ
সার্চ কমিটি নিয়ে মিথ্যাচার করছে বিএনপি
এতিমদের অর্থ আত্মসাৎ: জিয়া পরিবারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির একটি বড় উদাহরণ