১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার পর দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসে জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুর খুনি এবং মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সহায়তায় ১৯৮১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রাখে সে। নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সেনানিবাসের ভেতরে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা ও সেনা সদস্যদের কোণঠাসা করতে শুরু করে স্বৈরাচার জিয়া। পাকিস্তানফেরত কর্মকর্তাদের কাছে টেনে নিয়ে, রণাঙ্গণের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন অজুহাতে চাকরিচ্যুত ও প্রহসনের বিচারে হত্যা করে সে।
১৯৮৪ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা জর্নালে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র-বিজ্ঞানী সৈয়দ সিরাজুল ইসলামের সেই গবেষণার তথ্য অনুসারে- ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেজর জেনারেল ও ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ের কর্মকর্তা ছিলেন কমপক্ষে ৫০ জন। তাদের মধ্যে মাত্র দুই জন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। এমনকি ১৯৮০ সাল নাগাদ মুক্তিযুদ্ধের ৮ জন সেক্টর কমান্ডারের মধ্যে মাত্র দুজন তখন আর্মির চাকরিতে বহাল ছিলেন। তাদের মধ্যে জেনারেল শওকত আলীকে কমান্ড থেকে অপসারণ করে ঢাকার স্টাফ কলেজের প্রিন্সিপাল পদে বদলি করে রাখা হয়। আর জেনারেল মঞ্জুরঢাকা থেকে দূরে যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য তৎকালীন দুর্গম এলাকা চট্টগ্রামে পোস্টিং দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ জিয়াউর রহমান: যে পাঁচটি বিষয় তাকে আলোচিত-সমালোচিত-বিতর্কিত করেছিল
প্রতিরক্ষা বাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রভাব কমানোর জন্য, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত, ব্যাপকহারে মাস্টারপ্লান বাস্তবায়ন করে খুনি জিয়া। নতুন করে নিয়োগের মাধ্যমে সেনা জনবল বৃদ্ধি করে সে। ফলে খুব দ্রুতই মুক্তিযোদ্ধা সেনার পরিমাণ ১৫ শতাংশে নেমে আসে। রণাঙ্গণের সাহসী ও দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের কোণঠাসা করার জন্য পাঁচ ডিভিশন থেকে দ্রুত নয় ডিভিশনে উন্নীত করা হয় সেনা সদস্যের সংখ্যা। তবে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সেই রিক্রুটিংয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। ফলে সেনানিবাসের ভেতরে ও বাইরে মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিক জনগণের থেকে স্পষ্টতই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান।
আরও পড়ুনঃ