বিএনপির অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বিদেশি কূটনৈতিক অঙ্গনে বা দূতাবাসে নানারকম আর্জি, তদ্বিরের উদ্দেশ্যে বগলতলায় ব্রিফকেস নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করা ছাড়া, তারা কখনই পশ্চিমা দেশগুলোকে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে শান্তির বাণী শোনায়নি। যুদ্ধ থামানো কিংবা পশ্চিমা আগ্রাসনে মধ্যপ্রাচ্যে সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি বন্ধের দাবি করেনি।
আরও পড়ুন : ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির সাথে বিএনপির সখ্যতা
তবে এবার সুর বদল করলো বিএনপি। পশ্চিমা প্রভুদের খুশি করতে বেছে নিয়েছে অভিনব পন্থা। মিথ্যে মায়াকান্না কেঁদে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে গতকাল ৪ঠা মার্চ আয়োজন করে এক সংবাদ সম্মেলনের। সেখানে বিএনপির পক্ষ থেকে রাশিয়াকে বলা হয়েছে অবিলম্বে ইউক্রেনে আগ্রাসন থামাতে।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশে ইসরায়েলের দূতাবাস স্থাপনের শর্তে মোসাদের সাহায্য চেয়েছিলো তারেক জিয়া
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এতোদিন তাহলে যুদ্ধ ইস্যুতে তাদের মুখে কুলুপ আঁটা ছিল কেন? নাকি এখন পশ্চিমারা কোলে তুলে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে, এমন কল্পনা-বিলাসী চিন্তাভাবনা থেকেই বিএনপির এই পথে হাঁটা?
সূত্র বলছে, নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য পেট্রোল বোমা দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা কিংবা ২১শে আগস্টের মতো নৃশংসতম ঘটনা ঘটানো বিএনপির জন্য ডাল-ভাত। যার নমুনা একবার-দুবার নয়, অসংখ্যবার দেখেছে দেশবাসী। যার ফলাফল হাতেনাতে পেয়েছে বিএনপি। ব্যালট-ইভিএমে বারবার বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করে জানান দিয়েছে, রক্ত-লাশের রাজনীতি চর্চাকারী বিএনপিকে বাংলার মানুষ চায় না।
আরও পড়ুন : ভুয়া ভোটার ব্যবহার করা যায় না বলে ইভিএম-এ অনীহা বিএনপির!
কিন্তু কে শোনে কার কথা! ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে অনলাইনে সরকারের বিরুদ্ধে গুজব-কুৎসা রটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করেও যখন সফলতার দেখা মিলছে না, তখনই জঙ্গিবাদের মদদদাতা বিএনপি চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুকে পুঁজি করে চাইছে নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের।
আরও পড়ুন : ফরেন এজেন্টদের দিয়ে চক্রান্ত চালাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত
তারই অংশ হিসেবে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ৪ঠা মার্চ (শুক্রবার) রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলে, সরকারের এই যুদ্ধ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। সচেতন মানুষ হিসেবে আমরা দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে যেন ইউক্রেনের ওপর থেকে সকল আগ্রাসন থামিয়ে দেয় রাশিয়া।
আরও পড়ুন : আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোতে টাকা ঢালছে তারেক-জামায়াত
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন অবস্থানের সমালোচনা করে দেশের বিশিষ্টজনরা বলছেন, সরকার দেশের জন্য যা মঙ্গল, তাই করছে। যদি না করতো তবে দেশ আজ এখানে, এই অবস্থায় পৌঁছাতে পারতো না। আর ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হলেই সরকার দেশটি থেকে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নিজ খরচে দেশে প্রত্যাবর্তন বা পার্শ্ববর্তী দেশে সরিয়ে নেয়াসহ সময়োপযোগী উদ্যোগ নিয়েছে।
আরও পড়ুন : ইউক্রেন থাকা ৪১৮ বাংলাদেশি নিরাপদ আশ্রয়ে
তাছাড়া ইউক্রেনে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’র ওপর রকেট হামলায় থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান নিহত হওয়ার পর জাহাজের অন্যান্য নাবিকদেরও সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে রোমানিয়াতে আছেন, শীঘ্রই দেশে ফিরবেন।
আরও পড়ুন : ‘এভাবে ফিরে আসা ছিল অকল্পনীয়, ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’
এরপরও যুদ্ধ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপির করা মিথ্যে মায়াকান্না প্রমাণ করে, তারা পশ্চিমাদের কোলে চড়ে ক্ষমতায় যেতে এই নাটক মঞ্চস্থ করেছে।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত : মার্কিন সংস্থাকে বিএনপির বিপুল অর্থায়নের নথিপত্র ফাঁস
তাছাড়া বিবদমান দুটি দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে তৃতীয় দেশ হিসেবে নাক গলানো কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। বিশেষ করে যেখানে দুটি দেশই বাংলাদেশের মিত্র, দুদেশের সাথেই রয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক এবং দৃঢ় কূটনৈতিক সম্পর্ক, সেখানে একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে না গিয়ে আগ বাড়িয়ে দুই দেশকে পরামর্শ দিতে যাওয়া হবে হঠকারিতা।
আরও পড়ুন : ‘ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ঠিকই আছে’
[বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিনষ্টের নয়া মিশন বিএনপির!]
ইউক্রেনের পক্ষে পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন রয়েছে সরাসরি; যে পশ্চিমা দেশগুলোতে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুদৃঢ়। আবার একাত্তরে পশ্চিমা বিশ্বকে প্রতিরোধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরাণ্বিত করা বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বেড়েছে।
আরও পড়ুন : যুদ্ধের ডামাডোলের মাঝেও বাড়ছে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়
তাছাড়া বাংলাদেশের এ যাবৎকালের অত্যন্ত স্পর্শকাতর প্রকল্পগুলোর একটি- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণে কাজ করছে রাশিয়া, সেই সাথে বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের বড় কয়েকটি দল রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে পারমাণবিক প্রযুক্তির ওপর। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণের কাজটিও করছে রাশিয়া। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ এমন কোনো কূটনৈতিক অবস্থান নেবে না স্বভাবতই, যাতে সবদিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখানে বিএনপি স্রেফ উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন : মার্কিন ব্ল্যাকলিস্টেড সংস্থাকে BS-2 স্যাটেলাইট প্রজেক্ট দিয়ে পাল্টা কূটনৈতিক চাল বাংলাদেশের
দেশের সচেতন নাগরিকরা বলছেন, বিএনপির চরিত্র কতটা পবিত্র, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তাদের এই নাটক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের পন্থা। তারা মূলত সরকারের কূটনৈতিক অবস্থানকে বিচ্যুত করে দেশের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার জন্যই এসব উসকানি দিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন :