২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস। খালেদা জিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক যাচ্ছেন। ভিভিআইপি এরিয়া থেকে খলেদা জিয়ার ব্যাগপত্র তোলা হচ্ছে। প্রত্যেক ব্যাগে এসএসএফের সিকিউরিটি ট্যাগ লাগানো। প্লেনে ওঠানোর আগে সবগুলো ব্যাগের নিরাপত্তা তল্লাশি চালালেন এক তরুণ মেজর। এসএসএফ এর এই অফিসার লক্ষ্য করলেন একটি দামী ছোট ব্যাগে কোনো সিকিউরিটি ট্যাগ নেই।
আরও পড়ুন : দুবাইতে ক্রোক হচ্ছে খালেদার ১৩২ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি
তিনি সেটি সরিয়ে দিলেন। ব্যাগটা পড়ে থাকল এয়ারপোর্টে। মেজর একটি নোট লিখে এয়ারপোর্ট সিকিউরিটিকে ব্যাগটি দিলেন। এমিরেটসের ফ্লাইটটি চলে গেল।
বিপত্তি ঘটল নিউইয়র্কে গিয়ে। পরদিন সকালেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ। প্রধানমন্ত্রীর মেকআপ পারসন মাথায় হাত দিলেন। খলেদা জিয়ার সব কিছু এসেছে, আসেনি শুধু মেকআপ বক্স। হুলুস্থুল পড়ে গেল। ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে গেলেন না প্রধানমন্ত্রী। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমান কোনোমতে সামাল দিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সচিব, মুখ্য সচিব অনুসন্ধান শুরু করলেন। মেকআপ বক্স গেল কোথায়? ঢাকা আর নিউইয়র্কের সময়ের পার্থক্য ১২ ঘণ্টা। ২ দিন লেগে গেল কী হয়েছে জানতে। এই ২ দিন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে যেন শোকের মাতম চলছে। ২ দিনে ৩টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক বাতিল হয়ে গেল। বিকেলে বিএনপির মার্কিন প্রবাসীদের সঙ্গে বৈঠকও পিছিয়ে দেওয়া হলো।
আরও পড়ুন : জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় আরও বাংলাদেশি সেনা চায়, বিভিন্ন সংস্থার তদ্বির-অপপ্রচার ব্যর্থ
পত্রিকায় খবর এলো, খালেদা জিয়া অসুস্থতার জন্য বৈঠকে অনুপস্থিত। ঢাকা থেকে ওই মেকআপ বক্স আনতে আরও ২ দিন সময় লাগবে। অথচ প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে ভাষণ দেবেন পরদিন।
মেকআপ এক্সপার্টকে নিয়ে বেরুলেন খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ খান। লিস্ট ধরে ধরে দামী দামী সব ব্র্যান্ডের দোকান থেকে মেকআপ কেনা হলো। একটা করে জিনিস কেনা হচ্ছে আর বেচারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখটা লাল হয়ে উঠছে। বিকেল পর্যন্ত চলল কেনাকাটা। পরে মোর্শেদ খান তার একান্ত সচিবকে বললেন, ঢাকা থেকে টাকা পাঠাও। একান্ত সচিব অবাক হলেন। মন্ত্রী জানালেন, ৬২ হাজার ডলার খরচ হয়েছে মেকআপের জিনিসপত্র কিনতেই!
আরও পড়ুন : ফয়সাল মোরশেদ খান : ধরাছোঁয়ার বাইরে এক যুবরাজ !
যাই হোক শেষ পর্যন্ত, খালেদা জিয়া মেকআপ করলেন। সন্ধ্যায় ঝলমলে প্রধানমন্ত্রী বেরুলেন বিএনপির স্থগিত হওয়া বৈঠকে যোগ দিতে। বৈঠকে যেতে যেতেই সচিবকে বললেন খালেদা- কে এইটা করেছে, তাকে এখুনি চাকুরিচ্যুত করতে।
[খালেদার সেই ৬২ হাজার ডলারের মেকআপ সামগ্রী এবং চাকরিচ্যুত এক সেনা কর্মকর্তার কথা]

ঢাকায় বার্তা গেল। এসএসএফ প্রধান ১ ঘণ্টার মধ্যে ওই মেজরকে এসএসএফ থেকে প্রকত্যাহার করলেন। সেনাপ্রধানকে জানানো হলো, অবিলম্বে তাকে সাসপেন্ড করতে হবে। সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ তদন্ত কমিটি করলেন। বিপত্তি ঘটল এখানেই। তদন্ত কমিটি তদন্তে দেখলো ওই মেজরের কোনো দোষ নেই।
খালেদা জিয়া নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরে এলেন। সব কিছু ঠিকই চলতো হয়তো। কিন্তু মেকআপ করতে বসলেই, তার মেকআপ বক্স হারানোর কথা মনে হয়। তিনি রেগে ওঠেন। সচিবকে জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো?
আরও পড়ুন : বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: বিএনপিপন্থী চাকরিচ্যুত সেনাদের গোপন বৈঠক ফাঁস
সচিব ফোন করেন সেনাপ্রধানকে। সেনাপ্রধান বলেন- দেখছি। একদিন সত্যিই রেগে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। ডেকে পাঠালেন সেনাপ্রধানকে। সেনাপ্রধান বুদ্ধিমান। তিনি তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে গেলেন। খালেদা জিয়া কড়া গলায় বললেন, এসব রিপোর্ট বুঝি না। আমি তাকে চাকরিচ্যুত দেখতে চাই।
সেনাপ্রধান পরদিন ওই কর্মকর্তাকে দ্রুত বিদেশি মিশনে পাঠানোর উদ্যোগ নিলেন। খলেদা জিয়াকে জানানো হলো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
২০০৭ সালে ওই মেজর লে. কর্নেল হিসেবে খালেদা জিয়ার বাসায় গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেন। এভাবেই প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়।
আরও পড়ুন :