র্যাব-পুলিশসহ দেশের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার কঠোর নজরদারিতে অনেকদিন ধরেই আন্ডরওয়ার্ল্ডের ওয়ারলর্ডরা গা ঢাকা দিয়ে ছিল। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে এই শীর্ষ সন্ত্রাসীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে। ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। জাফর আহমেদ মানিক, বিকাশ, প্রকাশ, জিসানরা বিভিন্ন জায়গায় তাদের ক্যাডাদেরকে সংঘবদ্ধ করছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। আর এর কারণেই ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিশেষ করে শাজাহানপুরের ডাবল মার্ডার, বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনার পেছনে আন্ডারওয়ার্ল্ডের অস্থিরতাই দায়ী বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মনে করছে। আর এই আন্ডারওয়ার্ল্ডকে সক্রিয় করার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখছেন লন্ডনে পলাতক বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সমাজচিন্তক এবং বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন লেখায় উদ্বেগ প্রকাশিত হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে। বিশেষ করে ছিনতাই-চাঁদাবাজি এবং অন্যান্য অন্যান্য অপরাধপ্রবণ ঘটনাগুলো বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো আবার সক্রিয় হচ্ছে। এর নেপথ্যে রয়েছে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীরা।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনে। তখন অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সীমান্ত গলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। আবার অনেকের সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কারাগার থেকে বেরিয়ে বিদেশে চলে যায় অথবা আন্ডারগ্রাউন্ডে ঢুকে পড়ে। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের অন্যতম সাফল্য ছিলো যে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ।
আরও পড়ুনঃ
জেএমবির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তারেক রহমান: উইকিলিকসের নথি ফাঁস
বাবার মতই ঠান্ডা মাথার খুনি তারেক রহমান
বিশেষ করে ঢাকা শহরে ছিনতাই-চাঁদাবাজি, খুন-হত্যা ইত্যাদি ঘটনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এটি আওয়ামী লীগের একটি বড় সাফল্য হিসেবেই বিবেচিত হয়েছিলো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিক, বিকাশ, প্রকাশ এবং জিসানসহ বিএনপি-জামায়াতের ‘নিরুদ্দেশ’ সন্ত্রাসী ক্যাডারদের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাদেরকে আবারও প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
মূলত বিভিন্ন এলাকাগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা ছোট ছোট ক্যাডারদেরকে সংঘবদ্ধ করার চেষ্টা করছে। আর এতে তাদের মধ্যে এলাকার দখল বা বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। অস্ত্র প্রদর্শন, হুমকির ঘটনাও শোনা যাচ্ছে।
তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের এই সক্রিয় অবস্থানের পেছনে একটি রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি রয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করা, হত্যা-সন্ত্রাস ইত্যাদি বাড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার একটি নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। আর এ কারণেই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সক্রিয় করা হচ্ছে। বিশেষ নির্দেশ পেয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীরাই সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য কাজ করছে। আর এর পেছনে রয়েছে লন্ডনে পলাতক বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ নিয়ে দুবাই কেন্দ্রিক একটি মাফিয়া গোষ্ঠীর যোগসূত্র জানতে পেরেছে গোয়েন্দা সংস্থা।
[কলকাঠি নাড়ছেন তারেক, আবারও সহিংসতায় মেতে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ড]
তারেক রহমানের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সখ্যতা অনেক পুরনো। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আগেই তারেক আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকে কোণঠাসা করা, আলোচিত নেতাদেরকে হত্যা এবং ক্যাম্পাস ছাড়া করার পেছনে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী ক্যাডাররা একযোগে কাজ করে সেই সময় থেকেই। মূল সংগঠনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয় তারা। বিনিময়ে পায় হাওয়া মহলের ছত্রছায়া, টেন্ডারবাজির মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হওয়ার সুযোগ।
সারাদেশ পরিণত হয়েছিল সন্ত্রাসের জনপদে। সেসময়কার শীর্ষ পত্রিকাগুলো প্রথম পাতাজুড়ে দেখা যেত, ছাত্রদল-শিবিরের তাণ্ডব, রগকাটা, হত্যা করে লাশ ম্যানহোল বা নর্দমায় ফেলে রাখা, বাসায় ঢুকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে কলেজ অধ্যক্ষকে হত্যা, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনসহ চাঞ্চল্যকর সব নৃশংসতার ঘটনা। এমনকি ইডেনসহ বিভিন্ন কলেজে নারী সন্ত্রাসীরাও পিছিয়ে ছিল না। হলের সিট বাণিজ্য, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ক্যাম্পাস ছাড়া করার কাজেও তারা সক্রিয় ছিল।
২০০৮-এর নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপে ফেলে দিয়েছিলো আন্ডারওয়ার্ল্ডের এই তৎপরতা। বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাস এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটানো হয়েছিলো পরিকল্পিতভাবে। এবারও সে রকম ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা চলছে বলে বিভিন্ন সূত্রগুলো মনে করছে।
তারেক রহমানের অর্থায়নে এবং মদদে আন্ডারওয়ার্ল্ড বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ে থাকা সন্ত্রাসীদেরকে সংঘবদ্ধ করা হচ্ছে। তারা নতুন করে অপরাধ তৎপরতা শুরু করেছে। বিভিন্ন জায়গায় তারা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
একাধিক সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে আন্ডারওয়ার্ল্ড দীর্ঘদিন নেতৃত্বশূন্য ছিলো। আর এই সুযোগেই তারেক রহমান বিভিন্ন পলাতক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে পুনর্বাসনেরর চেষ্টা করেছেন। এর ফলে সামনের দিনগুলোতে ঢাকা শহরে সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুনঃ