বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার চেয়েও বহুগুণ ভয়াবহ হবে 

0
934
শ্রীলঙ্কা

৭ দিনের ক্ষুধার্থ ছাগল আস্ত বাঘ খেয়ে হজম করে ফেলতে পারে- আফ্রিকান প্রাচীন প্রবাদ। বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে। যে দলটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সর্বগ্রাসী এক ব্ল্যাকহোল হিসেবে পরিচিত, সেই রাজনৈতিক দলের নেতারা ক্ষুৎপিপাসায় কাতর হয়ে প্রতিদিন তিনবার করে আলাদা আলাদা সংবাদ সম্মেলনে সরকার ফেলে দেওয়ার ডাক দেয়। দেশি তাঁবেদারদের নিয়ে বিদেশি প্রভুদের দরজায় দরজায় ঘোরে সরকার ফেলে দিতে যেন তারা সহযোগিতা করে। এখানে-ওখানে চিঠি দেয়, সরকারের নামে নানারকম উদ্ভট অভিযোগ দিয়ে বসে!

বসে খেলে রাজার ধনভাণ্ডারও ফুরিয়ে যায়- এটা বাংলা প্রবাদ। হাজার হাজার কোটি ডলার বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করা বিএনপির নেতাদের ধনভাণ্ডারে টান পড়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পেছনে দেদারসে ঢালতে হচ্ছে নিয়মিত। আর কত? উন্নয়নের মহাসড়কে চলতে থাকা এই উন্নত বাংলাদেশে টাকার কি অভাব আছে? ক্ষমতায় যেতে পারলে তো লুটেপুটে সেই পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এই আশায় রাজনীতি করেন বিএনপির কর্মীরা। নইলে বর্তমান সরকারের এত সাফল্য, অর্থনীতি শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া- এমন বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়ে সব থমকে যাক- কেউ চায় না।

বিএনপির হাতে তাই দ্বিতীয় কোনো রাস্তা নেই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে। হাওয়া ভবনের সেই খাওয়া-খাওয়ির সুযোগ মিলছে না। নতুন প্রজন্মের কেউই বিএনপির রাজনীতিতে আস্থাশীল নয়। পুরনো নেতাদের বয়স বেড়েছে। শেষ বয়সে ক্ষমতায় গিয়ে মেগা লুটপাট চালাতে না পারলে আর কিসের রাজনীতি? আশায় বেঁধেছেন তারা খেলাঘর।

সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি একটি বহুল আলোচিত বিষয়। একটি রাষ্ট্রের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে আঁতকে উঠেছেন অর্থনীতিবিদরা। শ্রীলঙ্কার সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পার্থক্য অনেক।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি যে কারণে শ্রীলঙ্কার মতো ঠুনকো নয়

বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ-ইআরডি এর মতে, যে কোনো প্রকল্পের আউটকাম তথা রিটার্নের বিষয়টি মাথায় রেখেই সহজ শর্তে ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়া হয়। ফলে বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণ-জিডিপির অনুপাত ৬১ শতাংশেরও বেশি, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, কোনো দেশের বৈদেশিক ঋণ-জিডিপি অনুপাতের ২০ শতাংশকে আদর্শ ধরা হয়। সেদিক থেকে জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের বর্তমান ঋণ মাত্র ১৬ শতাংশ। এখানেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কার থেকে বাংলাদেশ তুলনামূলক স্থিতিশীল।

বাংলাদেশ ঋণও নেয় সহজ শর্তে। আমাদের বৈদেশিক ঋণে একদিকে সুদহার কম অন্যদিকে পরিশোধের সময়ও বেশি থাকে। ফলে শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা হওয়ার কোনো কারণ নেই, অন্তত তেমন কোনো সম্ভাবনাও নেই। বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত ঋণখেলাপি হয়নি। যথাসময়ে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি সুনাম রয়েছে বিশ্বব্যাপী। তাই নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সাথে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অবস্থা ভিন্ন।

এ তো গেল অর্থনীতির খবর। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ফ্যাক্ট এবং সম্ভাবনা নিয়ে প্রায়শ আলাপ করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির ভবিষ্যৎ এবং সম্ভাবনার কথাও আলোচিত হয়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ তথা ‘ইমার্জিং টাইগার অব এশিয়া’ যে অবস্থানে উঠে এসেছে, বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারলে ভয়াবহ অঘটন ঘটে যেতে পারে! কেন, সে বিষয়গুলো দেখা যাক-

বিএনপির আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়ম:

বিএনপির কাছে অর্থনীতি আর অর্থপাচার ও কমিশনের বিনিময়ে বিদেশিদেরকে একচেটিয়া লুটপাট চালানোর বন্দোবস্ত করে দেওয়া ছিল সমার্থক। এখানে কিছু পুরনো কথা মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন নতুন প্রজন্মের কাছে। যারা বিএনপির ভুল বাঁশিতে বিপ্লবের আহ্বান শুনতে পায়, তাদের উদ্দেশ্যে।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ বাংলাদেশই থাকবে; কখনোই শ্রীলঙ্কা হবে না

বিএনপি সরকারের ১৯৯১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত শাসনামলে দেশে আনুমানিক দুর্নীতির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে দেশে আনুমানিক দুর্নীতির পরিমাণ ৪২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এই দুটো হিসাব শুধুমাত্র হদিস পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রাপ্ত। এর বাইরে সত্যিকারের দুর্নীতির পরিমান অন্তত কয়েকশ গুণ বেশি বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের ধারণা। এছাড়া পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ যতটা জানা গেছে, তা সমুদ্রের মাঝে এক চামচ পানির সমতূল্য। বিশ্বের কোনো দেশ পরপর ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি, যা পেরেছে শুধুমাত্র খালেদা জিয়ার ২০০১ থেকে ২০০৬ এর শাসনামল।

খালেদা জিয়ার পুত্র কোকোর সিমেন্স দুর্নীতি, চায়না হারবার দুর্নীতির ইতিহাস সবার জানা। পাচারকৃত অর্থের একটা অংশ ফিরিয়ে এনেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তারেক-মামুনের খাম্বা দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে খোদ এফবিআই তদন্ত করেছিল। এফবিআই’র তদন্ত প্রতিবেদনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তারেক রহমানের ৭ বছরের জেল দেয় এবং অর্থ পাচারের জন্য ২০ কোটি টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত।

জিয়া পরিবারের আরও যেসব ভয়াবহ দুর্নীতির মামলা আদালতে প্রমাণিত হয়, তার মধ্যে রয়েছে- নাইকো দুর্নীতি মামলা, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলাসহ আরও অনেক মামলা। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি এক গোপন তারবার্তায় মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টকে তারেক রহমান সম্পর্কে লিখেছেন- ‘তারেক রহমান বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির জন্য দায়ী যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে… সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও ভয়ংকর এবং একটি দুর্নীতিপরায়ণ সরকার ও বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতীক। তারেক রহমানের প্রকাশ্য দুর্নীতি মার্কিন সরকারের ৩টি লক্ষ্যকে, যথা: গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন এবং জঙ্গিবাদ নির্মূল করার মিশনকে প্রচণ্ডভাবে হুমকির সম্মুখীন করেছে… আইনের প্রতি তার প্রকাশ্য অশ্রদ্ধা বাংলাদেশে জঙ্গিদের মূল শক্ত করতে সহায়তা করেছে।’ এই গোপন বার্তাটি উইকিলিকসের ফাঁসকৃত নথিতে প্রকাশিত হয়।

জঙ্গিবাদে বিএনপির প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ:

এ তো গেল দুর্নীতির কথা। বাংলাদেশে ধর্মীয় জঙ্গিবাদের প্রাতিষ্ঠানিক সূচনা হয় কানাডার আদালত কর্তৃক দুবার সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে সাব্যস্ত বিএনপির হাতে। ক্লাসিফায়েড মার্কিন প্রতিবেদনে বিএনপির ব্যাপারে তীব্র নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ এবং উগ্র মৌলবাদকে লালন করে বিএনপি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে এখনো জঙ্গিবাদ এবং উগ্র মৌলবাদ বাংলাদেশে ক্রিয়াশীল রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ মার্কিন প্রতিবেদন: জঙ্গিবাদের মদদদাতা বিএনপি

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক টেরোরিস্ট গ্রুপ জামায়াত ও বিএনপি অভিন্ন সত্ত্বা হিসেবে কাজ করে। জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির- যেটি আরেকটি টেরোরিস্ট গ্রুপ (সন্ত্রাসী সংগঠন) হিসেবে চিহ্নিত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাল তালিকাভুক্ত। মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থা কর্তৃক শিবিরকে বিশ্বের ৩য় শীর্ষ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল (২০১৩ সালে)।

মার্কিন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জামায়াতের সঙ্গে হিযবুত তাহারির, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী সংগঠনের সম্পর্ক অটুট। জেএমবি বা হরকাতুল জিহাদের মতো নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রগতিশীল এবং মুক্ত গণতান্ত্রিক চর্চার বিকাশে একটি বাধা জামায়াত, যাকে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে বিএনপি।

উল্লেখ করা প্রয়োজন, সুইডেন থেকে প্রকাশিত নেত্র নিউজের সম্পাদক তাসনিম খলিল ওয়ান-ইলেভেনের পূর্বে বিএনপির পলাতক নেতা তারেক রহমানের সাগরসম দুর্নীতি, জঙ্গিবাদে সরাসরি মদদ ও জঙ্গিদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেয়ার বিষয়ে ‘প্রিন্স অব বগুড়া’ শীর্ষক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জঙ্গি নেতাদের সাক্ষাৎকার এবং বিশদ তথ্য প্রমাণসহ প্রতিবেদন তৈরি করেন। যাতে রাষ্ট্রীয় কয়েকটি নিরাপত্তা সংস্থার শীর্ষ পদে থাকা বিএনপির আশীর্বাদপুষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছিল।

সেই রিপোর্টটি প্রকাশিত হলে তাসনিম খলিলের ওপর নির্যাতন চালায় বিএনপির আজ্ঞাবহ সরকারি সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা। এতেই স্পষ্ট হয়, জঙ্গিবাদকে বিকশিত করার ক্ষেত্রে বিএনপির ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। এছাড়াও জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা জঙ্গি- বাংলা ভাই ও আব্দুর রহমানের সাথে ছিল তারেকের দহরম-মহরম সম্পর্ক। তারেক রহমানকে ‘মামা’ সম্বোধন করে সরাসরি ফোনালাপ করতেন বাংলা ভাই, এমন তথ্য প্রকাশিত হয়েছিল পত্রিকায়।

সরকারের ঘাড়ে চেপে বিএনপির মাফিয়া সাম্রাজ্য পরিচালনা:

হাওয়া ভবনের মাফিয়া সাম্রাজ্যের বিষয়টিও তরুণ প্রজন্মের জানা জরুরি। ২০০১ সালের ১লা অক্টোবর। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগেই হাওয়া ভবনে বিজয় উদযাপন শুরু হয়ে যায়। সে রাতেই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীত্ব নিলামে ওঠানোর ঘোষণা আসে বলে উইকিলিকসের ফাঁসকৃত নথিতে জানা যায়। ৬ই অক্টোবর রাতে হাওয়া ভবনে মন্ত্রীসভার পদ নিলাম হয়। ভাগ-বাটোয়ারা হয় দপ্তর। সেই সাথে তারেক রহমানের সাথে চুক্তি হয় নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দেয়ার।

সে সময় দুটি সমান্তরাল সরকারের ক্ষমতা দৃশ্যমান হয়। একটি হাওয়া ভবন সরকার অন্যটি প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সরকার। হাওয়া ভবনের পক্ষে সব মন্ত্রণালয়ে একজন করে প্রতিমন্ত্রী রাখা হয়, যারা তারেক রহমানের একান্ত অনুগত। মন্ত্রণালয়গুলোতে দুজন করে মন্ত্রী দিয়ে হাওয়া ভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ক্ষমতার ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা করেন সাবেক দেহরক্ষী এবং ১৯৯১-৯৬ মেয়াদের একান্ত সচিব মোসাদ্দেক আলী ফালুকে, যিনি ছিলেন কবরস্থানের গোরখোদক। তবে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হারিছ চৌধুরীকে পছন্দ করেন। হারিছ দীর্ঘদিন ধরে হাওয়া ভবনে কাজ করছেন এবং তারেক রহমানের একান্ত অনুগত। তবে তারেকের কালেক্টর হিসেবেই তার খ্যাতি এবং প্রভাব ছিলো। হারিছ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হওয়ায় হাওয়া ভবনের কব্জায় আসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

এরপর হারিছ চৌধুরী ও তারেক রহমান মিলে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক পদে নিয়োগ দেন আমলা এবং সচিবদের। বিএনপি-জামায়াত জোট এরপর প্রশাসনের পদোন্নতি, টেন্ডার, নিয়োগ থেকে শুরু করে যে কোনো চুক্তি- সবকিছুর ক্ষেত্রেই কমিশন বাণিজ্য শুরু করে। দুর্নীতি এবং লুটপাটের এক মহোৎসব শুরু হয় দেশজুড়ে। সবাই বুঝতে পারেন, টাকা ছাড়া দেশে কোনো কিছুই হবে না। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সমস্ত কর্মকাণ্ডে ১০% ব্যবস্থা চালু হয়। হাওয়া ভবনে ১০% টাকা না দিয়ে কেউ এমনকি রাস্তায় একটা পান দোকান বসানোরও সুযোগ পায় না।

দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে তারেক-মামুনদের নজর পড়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ওপর। এই কমিশন বাণিজ্যের জন্যই ভারতীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টাটার সঙ্গে কথা বলা শুরু করে তারা। বিএনপি প্রচার করে, টাটা বাংলাদেশে যে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করবে, তার ফলে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে। তবে বাংলাদেশে ব্যবসার বিনিময়ে টাটার কাছে ৫ হাজার কোটি টাকা দাবি করেন তারেক এবং মামুন। এরপরই বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রস্তাব থেকে সরে যায় টাটা।

এছাড়াও নৌমন্ত্রীর দুর্নীতির কারণে ডেনমার্কের বিপুল অর্থায়ন প্রত্যাহার, বিদ্যুৎ খাত থেকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন প্রত্যাহার, বাংলাদেশের শিক্ষকদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জাম সরবরাহে ডাচ সরকারের বিপুল অর্থায়ন প্রত্যাহারসহ আন্তর্জাতিক বহু সংগঠন সে সময় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল বাংলাদেশে বিনিয়োগ, সহায়তা এবং অর্থায়ন করা থেকে। ওয়ারিদ টেলিকমসহ যেসকল প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের জনগণের পকেট থেকে অর্থ তুলে নিতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তারাই তারেক রহমান ও তার সহযোগীদের বিপুল অঙ্কের চাঁদা দিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসার সুযোগ পায়।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দেওয়ার প্রবণতা

ক্ষমতায় থাকাকালে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, গুমসহ সকল ধরণের নিপীড়ন চালিয়েছে বিএনপি সরকার। অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও সাবেক সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয় শুধুমাত্র ২০০১-২০০৬ সালের মধ্যে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা করা হয় ১৮ বার। ২১শে আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন, আহত হন ৫শ’ জনেরও বেশি।

বিএনপি-জামায়াতের জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের একটি অতি সংক্ষেপিত খণ্ডচিত্র (২০০১-২০০৫) তুলে ধরা হলো-

২০০১ সাল:- ২০শে জানুয়ারি ২০০১- পল্টন সমাবেশে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের বোমা হামলা। ১৪ই এপ্রিল ২০০১- রমনা বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে হুজির বোমা হামলা, নিহত ১১, আহত দেড়-শতাধিক। ৩রা জুন ২০০১- গোপালগঞ্জের বানিয়ারচরের গির্জায় বোমা হামলা, নিহত ১০, আহত শতাধিক। ১৫ই জুন ২০০১- নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলা, নিহত ২২, আহত ১০০। ২৬শে সেপ্টেম্বর ২০০১- বাগেরহাটে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় বোমা হামলা, নিহত ৮, আহত ২০। ১৬ই ডিসেম্বর ২০০১- চট্টগ্রামের নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা গোপালকৃষ্ণ মুহুরীকে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীরা।

২০০২ সাল:- ২১শে এপ্রিল ২০০২- রাউজানে বৌদ্ধ ভিক্ষু জ্ঞানজ্যোতি মহাথেরাকে গভীর রাতে জবাই করে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। ২৬শে সেপ্টেম্বর ২০০২- সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের জনসভায় বোমা হামলা, নিহত ৪, আহত অর্ধ-শতাধিক। ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০০২- সাতক্ষীরার বড়পুকুরে মেলা-সিনেমা হল-সার্কাস প্রাঙ্গণে বোমা হামলা, নিহত ৩। ৬ই ডিসেম্বর ২০০২- ময়মনসিংহের ৩টি সিনেমা হলে বোমা হামলা, নিহত ২৭, আহত দুই-শতাধিক।

আরো পড়ুনঃ ‘বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় গেলে জঙ্গী রাষ্ট্র হবে’

২০০৩ সাল:- ১৭ই জানুয়ারি ২০০৩- টাঙ্গাইলের সখিপুরে মাজারে-মেলায় বোমা হামলা, নিহত ৭, আহত ২০। ১৩ই ফেব্রুয়ারি ২০০৩- দিনাজপুর শহরে জামায়াতের জঙ্গিদের আকস্মিক বোমা হামলা। ১লা মার্চ ২০০৩- খুলনায় বাণিজ্য মেলায় বিএনপি-জামায়াতের জঙ্গিদের বোমা হামলা, নিহত ১, আহত ১০ জন। ২৬শে আগস্ট ২০০৩- মহালছড়িতে চাকমা ও মারমাদের ৩০০ বাড়ি পুড়িয়ে ২ জন হত্যা, ১০ জন নারীকে ধর্ষণ করে জামায়াত-শিবিরপন্থী ক্যাডাররা। ১৮ই নভেম্বর ২০০৩- রাতের আঁধারে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় বাঁশখালীর সাধনপুর গ্রামের শীলপাড়ায় তেজেন্দ্র লাল শীলের বাড়ির একই পরিবারের ১১ জনকে।

২০০৪ সাল:- ১২ই জানুয়ারি ২০০৪- সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজারে আর্জেস গ্রেনেড হামলা, নিহত ৭, আহত ৫০। ১লা ফেব্রুয়ারি ২০০৪- খুলনায় পরিকল্পিত বোমা-হামলা, সাংবাদিক মানিক সাহা নিহত। ১লা এপ্রিল ২০০৪- চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান ধৃত, জড়িত তারেক জিয়া-বাবর নিজামী গং। ৭ই মে ২০০৪- গাজীপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টারকে হত্যা। ২১শে মে ২০০৪- ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা, নিহত ৩। ২৭শে জুন ২০০৪- সাংবাদিক হত্যার লক্ষ্যে জঙ্গি বোমা হামলা, নিহত সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু। ৭ই আগস্ট ২০০৪- সিলেটে আওয়ামী লীগের সভায় হুজির গ্রেনেড হামলা, আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম নিহত, আহত ২০। ২১শে আগস্ট ২০০৪- জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা, নিহত আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী, আহত ৫শতাধিক নেতাকর্মী।

২০০৫ সাল:- ১২ই জানুয়ারি ২০০৫- শেরপুর ও জামালপুরে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীদের বোমা হামলা, আহত ৩৫। ১৫ই জানুয়ারি ২০০৫- বগুড়া ও নাটোরে যাত্রা-পালা অনুষ্ঠানে জামায়াতের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের বোমা হামলা, নিহত ৩, আহত শতাধিক। ২৭শে জানুয়ারি ২০০৫- হবিগঞ্জে বিএনপি জামায়াত সন্ত্রাসীদের গ্রেনেড হামলা, অর্থমন্ত্রী কিবরিয়াসহ নিহত ৩, আহত ৫০। ১৭ই আগস্ট ২০০৫- লক্ষ্মীপুর-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম আদালতের একযোগে জেএমবির বোমা হামলা, নিহত ৩। ১৪ই নভেম্বর ২০০৫- ঝালকাঠি জেলা আদাতে বোমা-হামলা নিহত ২। ২৯শে নভেম্বর ২০০৫- চট্টগ্রামে হাইকোর্টে বোমা হামলা, নিহত ৩, আহত অর্ধশতাধিক। ২৯শে নভেম্বর ২০০৫- গাজীপুরে আইনজীবী ভবনে বোমা হামলা, নিহত ১০, আহত ২২০। ১লা ডিসেম্বর ২০০৫- গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বোমা হামলা, নিহত ১, আহত ৫০। ৮ই ডিসেম্বর ২০০৫- নেত্রকোনায় উদীচী কার্যালয়ে বোমা হামলা, নিহত ৮, আহত শতাধিক। ২৯শে ডিসেম্বর ২০০৫- চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সে বোমা হামলা, নিহত ৩, আহত ২৫।

বিদ্যুৎ খাতের বেহাল দশা বিএনপির সময়:

বিদ্যুতের কথা আলাদাভাবে বলতে হয়। সারাদিনে ১৪-১৫ ঘণ্টা লোডশেডিং, গ্রীষ্মে যা প্রকট আকার ধারণ করত। সেচের জন্য পাওয়া যেত না বিদ্যুৎ, ফলে ব্যাহত হতো কৃষি উৎপাদন। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন, সন্ধ্যা হতেই কেরোসিনের কুপি জ্বালাতে হতো। বিদ্যুতের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসা কৃষকের ওপর নির্বিচারে চালানো হয় গুলি। প্রাণ যায় অন্তত ৩০ জনের। আহত হন শতাধিক। বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে ক্রয় করা হয় খাম্বা। সারাদেশে খাম্বা লাগানো হবে- এই মর্মে শুরু হয় সাগরচুরি। মোট খাম্বার ২৫% সরবরাহ করে লোপাট করা হয় হাজার হাজার কোটি টাকা- এই দুঃসহ স্মৃতি এখনও কোটি কোটি মানুষের মনে তাজা।

আরও পড়ুনঃ বিদ্যুৎ চাওয়ায় বিএনপির আমলে ২০ জনকে হত্যা করা হয়

বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে দেশের বিদ্যুৎ খাতকে যেভাবে পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল তা নজিরবিহীন, যা পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায়নি। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এসে বিদ্যুৎ পেয়েছিল মাত্র ১৬শ মেগাওয়াট, চরিদিকে হাহাকার। দেশের অধিকাংশ মানুষের ঘরে আলো ছিল না। মাত্র কয়েক বছরে ১৬শ’ মেগাওয়াট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন পৌঁছে যায় ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াটে। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এসে দেখি বিদ্যুৎ উৎপাদন নেমে এসেছে ৩ হাজার ২শ মেগাওয়াটে! উৎপাদন না বাড়ুক, কিন্তু উল্টো কমে যাওয়া- এ এক অদ্ভূত শাসন ছিল বিএনপির।

আজ দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুতায়ন হয়েছে সব শহর, গ্রাম, চর, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের জনগোষ্ঠীর ৪৭ শতাংশ বিদ্যুত পেত। গত এক যুগে বাকি ৫৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎসংযোগের আওতায় এসেছে।

আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার কারণে বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক সংখ্যালঘু নির্যাতন:

বিএনপি আমলে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি আলাদাভাবে বলা উচিৎ। অক্টোবরের ২০০১ সালের নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি এবং জামায়াত জোট হিন্দুদের ওপর যে আক্রমণ করে তার বিভিন্ন খবরে ও প্রতিবেদনে অনেকবার উঠে এসেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন মতে, ২০০১ সালের ১লা অক্টোবর বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে ভোট না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি। নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট একের পর এক হামলা হয়। কারণ, হিন্দু ভোটাররা আওয়ামী লীগকেই ভোট দিয়েছিল।

প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়, বিএনপি জোটের হামলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিলো বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, যশোর, কুমিল্লা ও নরসিংদী। আক্রমণকারীরা হিন্দুদের বাড়িতে ঢুকে তাদের পরিবারের সদস্যদের মারধর, তাদের সম্পত্তি লুটপাট, দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং অনেক হিন্দু নারীদের ধর্ষণও করে।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের মতে, সেসময় কমপক্ষে ১৮৫ জন নারী ধর্ষিত হন বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদের দ্বারা। অনেক হিন্দু নারীকে অপহরণও করে তারা। অপহৃতরা পরবর্তীতে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন কি না তা এখনও অজানা। নিরাপত্তার শঙ্কায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো মুখ খুলতে সাহস করেনি। এসব হামলার কারণে ওই সময় হাজার হাজার হিন্দু পরিবার সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যান।

কানাডার ইমিগ্রেশন এবং শরণাথী বোর্ডের গবেষণা অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০১ সালের ১লা অক্টোবর বাংলাদেশে নির্বাচনের সময়কালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতার ঘটনাগুলো বিবিসি (১০ই অক্টোবর ২০০১), গাল্ফ নিউজ (১২ই ফেব্রুয়ারী ২০০২), প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (২০শে অক্টোবর ২০০১), এবং প্যাক্স ক্রিস্টি (২৬শে নভেম্বর, ২০০১) ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনাগুলোতে ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা ও লুটপাটের পাশাপাশি হিন্দুদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সহিংসতার শিকার হয়ে হাজার হাজার হিন্দু পরিবার সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। দ্য ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়য়েন্স জানায়, বেশিরভাগ সহিংসতা বিএনপির কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত হয়… হিন্দুদের ওপর আক্রমণগুলো সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় ঘটেছে।

২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর বিএনপি-জামায়াতের হামলার খবর যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টর আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিবেদন ২০০৫-এ প্রকাশ পায়। সেখানে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্তৃক হিন্দুদের ওপর সহিংস আচরণ করা হয়েছে, কারণ ঐতিহ্যগতভাবেই তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। প্রতিবেদনটিতে বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে হত্যা, ধর্ষণ, লুট এবং নির্যাতনের কথা উল্লেখ ছিল।

বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগের তদন্ত অনুযায়ী, দেখা গেছে বিএনপি-জামায়াতের ২৬ হাজার ৩৫২ জন নেতা এবং সমর্থকের ওই দাঙ্গায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয় গেছে। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ২৬ জন মন্ত্রী এবং সাংসদ রয়েছেন। অভিযুক্ত ৬ মন্ত্রী হলেন- রহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আবদুস সালাম পিন্টু, মতিউর রহমান নিজামী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, তারিকুল ইসলাম ও হাফিজউদ্দিন। তাদের মধ্যে, আলতাফ হোসেন চৌধুরী তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

পরিশেষে:

এসব ইতিহাস এই প্রজন্ম হয়ত জানেইনা। সেসময় পত্র-পত্রিকা অনলাইন নির্ভর ছিল না বলে সহজে তথ্যগুলো পাওয়া যায় না। তবে পুরনো পত্রিকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের কপি বিভিন্ন লাইব্রেরি, অনলাইন আর্কাইভে আজও পাওয়া যায়। যে কেউ চাইলেই এসব তথ্য যাচাই করে নিতে পারেন।

এখানে একটা সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হলো মাত্র। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে। আর এসেই নিজেদের গদি সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে দেড় কোটি ভুয়া ভোটার তৈরি করে। পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল এবং প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগকে চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ নিপীড়ন চালায়। সেইসাথে হাওয়া ভবনের মাফিয়া সাম্রাজ্যের মাধ্যমে পুরো দেশকে গিলে খায় বিএনপি-জামায়াত অজগরের মতো। মাত্র ৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেই তাদের এই ক্ষুধা তৈরি হয়েছিল।

এই বিবেচনায় ধারণা করা যায়, যদি ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ক্ষমতায় আসে, দেশের কী হাল হবে? নিজেকে প্রশ্ন করুন, ভাবুন।

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে