আওয়ামী লীগের আদর্শ এবং ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান নিতেই ক্যান্টনমেন্টে জন্ম হয়েছিল বিএনপি নামক দলটি। আর তাই আওয়ামী বিরোধী পক্ষ থেকে কুড়িয়ে, সংগ্রহ করে দলে ভর্তি করা হয় নেতাদেরকে। যার ফলে আদর্শ বলতে দলের নেতাকর্মীরা বোঝেন ‘জিয়ার আদর্শ’-কে। কিন্তু কী সেই আদর্শ, তা তারা স্পষ্টভাবে বলতে পারেননা। উগ্রবাদী আর বিদেশি লেজুড়বৃত্তি করা নেতাদের সমন্বয়ে গড়া দলটি তাই জন্মলগ্ন থেকেই চীন এবং পাকিস্থানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে আসছিল। যে দুটি দেশ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল।
আরও পড়ূন : বাংলাদেশ নিয়ে তিন পরাশক্তির ‘প্রক্সি যুদ্ধ’

এছাড়া সৌদি আরব, লিবিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও ছিল বিএনপির মধুর সম্পর্ক। এই দুটি দেশও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ষড়যন্ত্র করেছিল। সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি বঙ্গবন্ধুর হত্যার আগ পর্যন্ত। লিবিয়ায় গাদ্দাফির আঁচল তলায় আশ্রয় নিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। লিবিয়ার আর্থিক সহায়তা, অস্ত্র সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণে গড়ে উঠেছিল কুখ্যাত দস্যুদল- ‘ফ্রিডম পার্টি’। যারা বাংলাদেশে অরাজকতার জন্য অন্যতম দায়ী। বিএনপি দেশের জনগণের চেয়ে নির্ভর করে বিদেশি অপশক্তির ওপর। বিভিন্নমুখী রাজনৈতিক টানাপোড়েনে যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ধীরে ধীরে সবই হারিয়েছে আদর্শহীন দলটি।
বর্তমানে বিএনপির এমন অবস্থা যে, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিএনপিকে নিয়ে চলছে ব্যাপক হাস্যরস। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী দেশগুলো এখন বাংলাদেশকে সমীহ করে চলে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে বিনিয়োগবান্ধব এবং ব্যবসার অনুকূল দেশ বলে মনে করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্যের গন্তব্য এখন সেসব দেশ। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তাই এখন আর বিএনপির কোনো পাত্তা মেলে না।
আরও পড়ূন : বিএনপি কি চীনকে পাশ কাটাচ্ছে?
উল্টো উন্নয়নমূলক সকল কাজের অহেতুক এবং অযৌক্তিক সমালোচনা ও বিরোধিতাকারী বিএনপির এমন রাষ্ট্রবিরোধী রাজনীতির ধরণ দেখে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ব্যাপক হাসাহাসি করা হয়। বিশেষ করে দলের প্রধান দুই ব্যক্তি আদালতের রায়ে অযোগ্য বিবেচিত হওয়া সত্ত্বেও তারা পদ আঁকড়ে বসে আছেন এবং বিদেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন দলের রাজনীতি। কেউ যৌক্তিক কথা বললে, দাবি তুলে ধরলে তাকেই বহিষ্কার করা হচ্ছে; তা-ও আবার একবার-দুবার নয়, মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামান ইতিমধ্যে ৫ বার বহিষ্কৃত হয়েছেন। দলীয় প্রধানের উপদেষ্টাকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের কাছে পেট্রোল বোমা হামলার নির্দেশ, পুলিশ হত্যার নির্দেশ ও সহিংসতায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী এই রাজনৈতিক দলটির গ্রহণযোগ্যতা ইতিমধ্যেই ফুরিয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়, বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়, চুক্তি বা সমঝোতা পিছিয়ে যায়- এমন অস্থিতিশীলতা চায় না বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রগুলো।
[আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিএনপিকে নিয়ে হাসাহাসি!]
বিএনপি আমলে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে না পেরে বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন সহায়তামূলক কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা প্রায়শ বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সময়ে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে অনেক বড় অঙ্কের ঘুষ দিতে হতো। তবে পরবর্তীতে সেসব কেলেঙ্কারির খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে আসায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্মকর্তাগণ এবং বিভিন্ন নামী-দামি কোম্পানিগুলো বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। যা নিয়ে সেসব দেশেও যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছিল। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার পেছনে তারা এখনও বিএনপিকে- বিশেষ করে খালেদা জিয়া ও তার পুত্রদের দায়ী করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যেসব বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র আগ্রহী, তারা তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতিবাজ বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এদিকে কানাডার আদালতও বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে অবহিত করেছে। ‘তারেককে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত’ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহু আগেই সে-দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া পাকিস্থান ও কাশ্মীরের কিছু আন্তর্জাতিক দুনিয়া স্বীকৃত সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বিদ্যমান ছিল। তারাই ২১শে আগস্টের জন্য পাকিস্থানে তৈরি আর্জেস গ্রেনেড সরবরাহ করেছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
আরও পড়ূন : বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলল ক্যানাডার আদালত
সবমিলিয়ে খুনি, দুর্নীতিবাজ, অর্থপাচারকারী তারেক রহমানের কারণেই বিএনপি এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মিত্রহীন একটি দলে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ূন : বিএনপি সার্কাস পার্টিতে পরিণত হয়েছে : পাপিয়া
দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি-বি), জেএমবি, জামায়াতে ইসলামিসহ বহু ক্ষুদ্র-বৃহৎ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গেও তারেক রহমান এবং বিএনপির যোগাযোগ ছিল। ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলকে এক মায়ের সন্তান বলে অবহিত করে তারেক রহমান আন্তর্জাতিকভাবে বিএনপির অবস্থানকে চূড়ান্ত বিপর্যয়ে পর্যবসিত করেন।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, তারেক রহমানের বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদেরও আস্থার অভাব থাকায় জ্যেষ্ঠ নেতাদের বেশিরভাগই তারেককে পছন্দ করেন না। তারা মনে করেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপি সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে একমাত্র তারেক রহমানের কারণেই। তাই মিত্রদের ওপর ভর করেও বিএনপি রাজনৈতিকভাবে এগুতে পারছে না।
আরও পড়ূন : গ্রুপিং-কোন্দল আর নেতাদের প্রতি অসন্তোষ, বিপর্যস্ত বিএনপি
এদিকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলা এবং অসুস্থতার কারণে দায়িত্বে থাকা তারেক রহমানের বিতর্কিত নানা সিদ্ধান্তে দলের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে কোন্দল। ফলে নেতা তৈরি হচ্ছে না দলটিতে। যার প্রভাবে বিদেশি সম্পর্ক তৈরি ও রক্ষায় অভাব দেখা দিয়েছে যোগ্য নেতৃত্বের।
আরও পড়ূন : বিএনপি হলো তারেকের পালিত নেতা দিয়ে চলা রাজনৈতিক দল
একটি সূত্র বলছে, পুরনো মিত্র চীনের সাথে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের এমন মধুর সম্পর্কে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বিএনপির নেতৃবৃন্দ। চীনাদের সাথে নতুন করে সম্পর্ক তৈরির জন্য যোগ্য নেতাও খুঁজে পাচ্ছে না দলটি। তরিকুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, সাদেক হোসেন খোকারা চীনসহ বিদেশিদের সাথে সফলতার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। তাদের মৃত্যুর পর নতুন বিএনপি নেতারা চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক করার ক্ষেত্রে তেমন সফলতা দেখাতে পারেননি। এমনকি কূটনৈতিক অঙ্গনে কীভাবে নিজেদেরকে তুলে ধরতে হবে, তা-ও জানে না তারা।
[আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিএনপিকে নিয়ে হাসাহাসি!]
সূত্র আরও জানায়, সম্প্রতি পাকিস্থানের কাছে রাজনৈতিক সহযোগিতা চেয়েছিল বিএনপি। সেখানেও ব্যর্থ হয়েছে দলটি। পাকিস্থান হলো বিএনপির সবচেয়ে পুরনো এবং ঘনিষ্ঠতম মিত্র, যা সকলেরই জানা। এমনকি পাকিস্থানের আদালতে আইএসআই এর সাবেক প্রধান জানিয়েছিলেন, পাকিস্থান সরকার বাংলাদেশের নির্বাচনে বিএনপিকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্থান নিজেই টালমাটাল অবস্থায় আছে। আর দেশটি নিজেই একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কাজেই বিএনপিকে সাহায্য-সহযোগিতা করার মতো অবস্থা তাদের নেই।
অথচ এক সময় খেয়ে-না খেয়ে হলেও আইএসআই বিএনপিকে আর্থিক এবং জঙ্গিদের সামরিক সুবিধা দিয়েছিল। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের নাশকতা ঘটানোর পেছনে অর্থায়ন, জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ, লোকবল সবই দিয়েছিল পাকিস্থান। জঙ্গিবাদকে রাষ্ট্রীয় প্রত্যক্ষ মদদে লালন এবং পরিচর্যা করার সবক বিএনপি পেয়েছিল পাকিস্থান থেকেই। আজ সেই পাকিস্থানের জনগণ খেতে পারছে না, একটা ডিমের দাম সেখানে ৩০ রুপি! আজ পর্যন্ত পাকিস্থানের কোনো সরকারই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি, ঘাড় ধাক্কা খেয়ে নেমে যেতে হয়েছে। সেই পাকিস্থানের ছত্রছায়াও হারিয়েছে বিএনপি।
আরও পড়ূন : আইএসআই’র সাথে গোপন বৈঠকের পর পাকিস্তানের পক্ষে ওকালতিতে বিএনপি!
উল্লেখ্য, বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে দেশে আন্দোলন করার চেয়ে বিদেশি বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করার কৌশল গ্রহণ করেছিল। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে দলটির একটি প্রতিনিধি দল ভারতে গিয়ে সে-দেশের থিঙ্ক ট্যাংকদের সাথে বৈঠক করেছিল।
আরও পড়ূন : ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির সাথে বিএনপির সখ্যতা
বৈঠকে ছিলেন আমির খসরু চৌধুরী এবং আবদুল আউয়াল মিন্টুর মত প্রভাবশালী নেতারা। সেখানেও বিএনপি আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে পারেনি। বিএনপির প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার নমুনা দেখেছে ভারত। পাকিস্থানের সাথে হাত মিলিয়ে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তায় ১০ ট্রাক অস্ত্র বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পাচার করার ঘটনার পর থেকে ভারতও বিএনপিকে আর বিশ্বাস করে না।
অর্থাৎ, উপমহাদেশেই বিএনপির কোনো মিত্র নেই, গ্রহণযোগ্যতা নেই; আর দূরদেশগুলোর সাথে সুসম্পর্কের চিন্তা তো বাতুলতা। বিএনপির অদ্ভূত অদ্ভূত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও বিদেশিদের কাছে বিনোদনের খোরাক।
আরও পড়ূন :