পুরো লন্ডনজুড়ে হৈ চৈ। পাকিস্তানপন্থী দুটি জঙ্গি সংগঠনের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি তারেক রহমানের বাড়িতে দুদিন ধরে গোপন বৈঠক করছে- এমন তথ্য পেয়ে ব্রিটিশ সিক্রেট পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপর কয়েকটি ইউনিট সেই বাড়িটি ঘিরে রেখেছে। ৩ কটসওয়ার্ল্ড ক্লোজ, কিংস্টন আপন টেমস, ইংল্যান্ড, কেটি২ ৭জেএন ঠিকানায় অবস্থিত তারেক রহমানের বিলাসবহুল বাড়িটির চারপাশে নজরদারি করছেন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।
ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য ছিল পাকিস্তানে দুটি শীর্ষ জঙ্গি সংস্থার সাথে যোগাযোগ রয়েছে, এমন পাঁচ জন ব্যক্তি ব্যবসায়িক ভিসায় লন্ডনে এসেছেন প্রায় এক মাস আগে। তাদেরকে সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নেন তারা। এই ব্যক্তিরা গত সপ্তাহে লন্ডন নিবাসী পাকিস্তানি কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে মিলিত হয়েছেন।
এছাড়া টাওয়ার হ্যামলেটস সংশ্লিষ্ট বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজন নেতৃবৃন্দের সাথেও তাদেরকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা গেছে। যেখানে বাংলাদেশে দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী পরিবারের কয়েকজন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। আর তাদের মাধ্যমেই তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাতের সময় নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করে লন্ডনভিত্তিক একাধিক সূত্র।
এদিকে দিনভর তারেক রহমানের কিংস্টনের বাড়িটি ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে রেখেছে ব্রিটিশ পুলিশ। সিক্রেট পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মি. মাইকেল আর্থার বলেন, বাংলাদেশি নাগরিক মি. তারেক সম্পর্কে জঙ্গিবাদে মদদের বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন রয়েছে। তার বাড়িতে কয়েকজন পাকিস্তানি সন্দেহভাজন লোকের আনাগোনা সম্পর্কে প্রতিবেশিরাও অভিযোগ করেছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
[এক্সক্লুসিভ: জঙ্গি নেতাদের সাথে গোপন বৈঠক, লন্ডনে তারেক রহমানের বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ]
তিনি আরও বলেন, গোয়েন্দা সূত্রে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। যাতে বলা হচ্ছে, উপমহাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতাকে পুঁজি করে পাকিস্তানের কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন বাংলাদেশে অপতৎপরতা চালাতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের কাছে থাকা সর্বশেষ তথ্য দিয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করেছি। এছাড়া আমাদের কাছে পাকিস্থানি জঙ্গি সংগঠনের যে লোকদের সম্পর্কে উদ্বেগজনক তথ্য রয়েছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মি. আর্থারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তারেক রহমানের বাড়িতে অবস্থানকারী পাকিস্থানি নাগরিকদের ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেপ্তার করবে কি না? জবাবে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, না; আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারি না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা যুক্তরাজ্যের মাটিতে কোনো ধরণের নাশকতা বা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটাচ্ছেন অথবা ঘটানোর পরিকল্পনা করছেন। এছাড়া কোনো ধরণের বেআইনি কাজে তাদের সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে যাবো। আমরা সদা সতর্ক আছি।
তবে, এই সাক্ষাতের বিষয়ে আমরা অবশ্যই মি. তারেক রহমানের কাছে জানতে চাইবো, বললেন মি. মাইকেল আর্থার। উল্লেখ্য, লন্ডনে তারেক রহমান এবং তার মা খালেদা জিয়ার সাথে জঙ্গিদের গোপন বৈঠক ইতিপূর্বেও হয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ জেএমবির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তারেক রহমান: উইকিলিকসের নথি ফাঁস
২০১৭ সালের ১৫ই জুলাই লন্ডন সফরে গিয়েছিলেন । চিকিৎসা এবং পরিবারের সদস্যদের দেখার নাম করে লন্ডন সফর করলেও সেসময় খালেদা এবং তারেকের সাথে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা এবং একটি জঙ্গি সংগঠনের কয়েকজন নেতার সাথে বৈঠক হয়েছে বলে নিশ্চিত তথ্য রয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার হাতে।
[এক্সক্লুসিভ: জঙ্গি নেতাদের সাথে গোপন বৈঠক, লন্ডনে তারেক রহমানের বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ]
এছাড়াও যুক্তরাজ্যভিত্তিক গোয়েন্দা সংস্থা সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এমাআই৬)-এর বরাত দিয়ে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, খালেদা জিয়া ওই বছরের ২০শে জুলাই তারিখে সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি হোটেলে আইএসআই এবং টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশনের কয়েকজন নেতার সাথে বৈঠক করছেন। সেসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তারেক রহমান এবং লন্ডনে পালিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দিন। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে যোগ দিয়েছেন আরেক পলাতক যুদ্ধাপরাধী আশরাফুজ্জামান, তার সাথে ছিলেন লন্ডনে জামায়তে ইসলামীর কয়েকজন নেতা ও দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সদস্যরাও।
সেই বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ২০১৮ সালের নির্বাচন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। খালেদা জিয়া বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার জন্য আইএসআই-এর সাথে সমযোতা করেন বলে দাবি সূত্রের।
২০শে জুলাই রাতের সেই বৈঠককে কেন্দ্র করে সেসময় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশের কয়েকটি মিত্র রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার লন্ডন অফিসগুলোতেও। দুই পাকিস্তানি কূটনীতিক (যাদেরকে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর এজেন্ট বলে উল্লেখ করেছে) সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলো বলে তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আবু সায়েমও নিশ্চিত করেছেন বিএনপির এক বৈঠকে। আর এই খবরটি চাউর হতেই নিজের বক্তব্য অস্বীকার করেন। তবে ২০শে জুলাই রাতের সেই বিশেষ ডিনার পার্টির এজেন্ডা প্রকাশ করতে অপারগতা জানান এই আইনজীবী।
আরও পড়ুনঃ