অকপটে নিজেকে আমেরিকার দালাল বলে স্বীকারোক্তি রেজা কিবরিয়ার (ভিডিও)

0
1856
রেজা কিবরিয়া

পিতা শাহ এএমএস কিবরিয়ার রক্ত মাড়িয়ে, তাঁর খুনিদের সাথে হাত মিলিয়ে সেই ২০০৬ সাল থেকে মার্কিনিদের দালালি করে যাচ্ছেন পুত্র রেজা কিবরিয়া। উইকিলিকস এর নথিতে উঠে এসেছে ভয়ঙ্কর সেসব তথ্য। কীভাবে বাংলাদেশকে বিকিয়ে দেওয়ার চক্রান্তে নিজের আত্মা বিক্রি করে দিয়েছেন রেজা, তা ইতিমধ্যে দেশবাসী জানেন।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী অপশক্তি ও মার্কিনিদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দিলেন রেজা কিবরিয়া। সেখানে নিজেকে একজন গর্বিত মার্কিন দালাল হিসেবেও নির্লজ্জভাবে উপস্থাপন করলেন তিনি।

বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দেশপ্রেমিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং দেশের অতন্ত্র প্রহীর সেনাবাহিনীর প্রতি চূড়ান্ত অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং লবিস্টদের মাধ্যমে আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ভূয়সী প্রশংসা করলেন দেশদ্রোহী রেজা কিবরিয়া। দেশের ক্ষতি হয়- এমন প্রতিটি পদক্ষেপকে স্বাগত জানান তিনি।

সম্প্রতি বাংলাদেশে পুলিশের বিশেষ বাহিনী র‍্যাব এবং এর কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়াকে বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও টকশোতে উৎফুল্ল প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান দেশের সচেতন সাধারণ মানুষ।

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রেজা কিবরিয়া জানান, এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় তিনি আমেরিকার প্রতি কৃতজ্ঞ।

আরও পড়ুনঃ ড. রেজা কিবরিয়া: র‍্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় আমেরিকার প্রতি ‘প্লিজড’ গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক

মাদক, জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে সফলভাবে দমনকারী র‍্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার প্রতি নিষেধাজ্ঞার ফলে নাকি দেশের সাধারণ মানুষের ওপর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ‘নির্যাতন প্রায় থেমে গেছে’! যথাযথ তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই সম্পূর্ণ মনগড়া এক অদ্ভূত দাবিও করলেন তিনি।

সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে তিনি আরও দাবি করেন, অচিরেই বাংলাদেশের আরও কয়েকজন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে আমেরিকা। তবে এসব খবর তিনি কোন ধারণা থেকে বলছেন, অথবা দায়িত্বশীল কোনো সূত্র থেকে খবর পেয়েছেন- তার কোনো উত্তর মেলেনি।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ইতিপূর্বে বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজও এমন হাস্যকর দাবি করেছিলেন এক সংবাদ সম্মেলনে। যার প্রেক্ষিতে মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার।

মার্কিন দূতাবাস থেকে বলা হয়, কারো ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি মার্কিন ইমিগ্রেশন বিভাগের অত্যন্ত গোপনীয় বিষয়, যা আরোপিত হয় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশিকা জারি হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউই জানতে পারেনা। এসব তথ্য মার্কিন আইন দ্বারা সুরক্ষিত। কেউ আগাম দাবি করলে তা সুস্পষ্ট মিথ্যাচার।

অতএব নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে রেজা কিবরিয়ার বক্তব্য পুরোপুরি গাঁজাখুরি এবং দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার একটি ঘৃণ্য কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।

এছাড়াও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভেদ তৈরির উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন রেজা কিবরিয়া। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে বিভেদ থাকা উচিৎ বলে জঘন্য বক্তব্য দেন তিনি। সেনাবাহিনীকে উসকানি প্রদানের প্রচেষ্টা দেশদ্রোহীতা হিসেবে বিবেচিত। এজন্য তার সর্বোচ্চ সাজা হওয়া উচিৎ।

প্রসঙ্গত, রেজা কিবরিয়া বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ শাহ এএমএস কিবরিয়ার একমাত্র পুত্র। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারে শাহ কিবরিয়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

রেজা কিবরিয়া অকপটে নিজেকে আমেরিকার দালাল বলে স্বীকারোক্তি রেজা কিবরিয়ার (ভিডিও)
রেজা কিবরিয়া

২৭শে জানুয়ারি, ২০০৫; হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা শেষ করে বের হওয়ার সময় শাহ এএমএস কিবরিয়ার ওপর আর্জেস গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়।

তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এ সংবাদ জানামাত্র চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত ঢাকায় আনতে তৎকালীন সরকারের কাছে কয়েকবার হেলিকপ্টার প্রেরণের আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু হেলিকপ্টার দেয়া হয়নি!

চিকিৎসার জন্য জনাব কিবরিয়াকে প্রথমে হবিগঞ্জ, তারপর মাধবপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রশাসনের অসহযোগিতা, ডাক্তারের অনুপস্থিতি, সর্বোপরি চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে তাকে যখন ঢাকার বারডেমে আনা হয়, তখন তিনি মৃত।

এ হামলায় তিনি ছাড়াও তার ভাইয়ের ছেলে শিল্পপতি শাহ মঞ্জুর হুদা, আওয়ামী লীগ কর্মী আবুল হোসেন, সিদ্দিক আলী ও আব্দুর রহিম নিহত হন, আহত হন অর্ধশতাধিক।

বর্ণাঢ্য ও কর্মময় জীবনে সাফল্যের শিখরে উঠতে পেরেছেন- এমন ব্যক্তিদের অন্যতম অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিবিদ এবং রাজনীতিবিদ শাহ এএমএস কিবরিয়া। মৃদুভাষী, পরোপকারী ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন।

শেখ হাসিনার অনুরোধ সত্ত্বেও রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসেননি। এএমএস কিবরিয়ার সংসদীয় আসনে যেন খুনিরা নির্বাচন করতে না পারে সেজন্য রেজাকে এই আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু রেজা উল্টো বলেছিলেন, “দেশের জন্য করেও জনাব কিবরিয়ার যে পরিণতি হয়েছে তাতে আমি আর রাজনীতিতে জড়াবো না।”

তিনি আরও বলেছিলেন, “বিএনপি-জামায়াত সরকারের ওপর আমাদের কোনো আস্থা নেই। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী হত্যার বিচার বা তদন্ত করেনি তারা। তাদের কাছে আমরা কিছু প্রত্যাশা করি না।”

[অকপটে নিজেকে আমেরিকার দালাল বলে স্বীকারোক্তি রেজা কিবরিয়ার (ভিডিও)]

এমনকি শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপিকে দায়ী করে মার্কিন দূতাবাসের কাছে আন্তর্জাতিকভাবে যৌথ তদন্তের দাবিও করেছিলেন রেজা কিবরিয়া।

বড় অদ্ভূত ব্যাপার। এরপরই তিনি সম্পূর্ণ বদলে যেতে থাকেন। মার্কিনিদের সাথে তার দহরম-মহরম বাড়ে। এমনকি পিতার খুনিদের সাথেও প্রেম গভীর হতে থাকে। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন তিনি।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে হবিগঞ্জের একটি আসন থেকে জাতীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হন, যেখানে তিনি বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পরে অবশ্য গণফোরাম থেকে বেরিয়ে যান রেজা কিবরিয়া।

গত বছর ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের সাথে গণঅধিকার পরিষদ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন রেজা কিবরিয়া, যেখানে তিনি আহ্বায়ক হন। সেখানে জামায়াত-শিবিরের ৫ শতাধিক ক্যাডারকে অন্তর্ভূক্তির ক্ষেত্রে নিজে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে।

এছাড়াও নুর-রেজা দুজন মিলে বিভিন্ন দূতাবাসে গিয়ে সেখানকার রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। দেশব্যাপী সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য অর্থায়নের প্রস্তাবও দেন তাদেরকে। সেখান থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলে নুরও তার ফেসবুক পেজগুলোতে জানান দেন।

পিতা আওয়ামী লীগ সরকারের একজন সফল মন্ত্রী হলেও রেজা অবস্থান নিলেন সেই দলের বিরুদ্ধে। বরং পিতার খুনিদের প্রতি অতিভক্তি, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া মার্কিন প্রভুদের প্রতি স্বেচ্ছা-দাসত্বের কথা খোলাখুলিই স্বীকার করলেন বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে।

আরও পড়ুনঃ আরেক হামিদ কারজাই হতে চান মার্কিন পুতুল রেজা কিবরিয়া?

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে