অল্প বয়স থেকেই শরীয়তপুর নিবাসী রহিমা বেগমের বেড়ে ওঠা ঢাকার গেন্ডারিয়ায়। সেখানে নামাপাড়া বস্তিতে থাকতেন পরিবার নিয়ে। সেখানে হযরত আলী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় তার। আলী বিভিন্ন সময় বিএনপির মিছিলে পিকেটিং করতেন, ভাঙচুর করার লোক সাপ্লাই দিতেন। প্রশাসনের নজরদারির পর তার কার্যক্রম কিছুটা কমে এলে বস্তি এবং আশপাশের এলাকায় স্বামী-স্ত্রী মিলে শুরু করেন মাদক ব্যবসা। গত ১০ বছরের ব্যবধানে কোটিপতি বনে যান তারা।
আরও পড়ুন : যেকারণে মাদক বিরোধী অভিযানে বিএনপির ‘না’
রহিমার স্বামী হযরত আলী ২০১৯ সালে “ক্রসফায়ারে” নিহত হলে স্বামীর কাজের ভারও নিজের কাঁধে তুলে নেন তিনি। আগের মত লোক সাপ্লাই দেওয়া শুরু করেন। পাশাপাশি মাদক ব্যবসাও চালিয়ে যান। গত চার মাস আগে রহিমা বেগমের ব্যাংক হিসাবে ১২ কোটি টাকা জমা থাকার তথ্য পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এর বাইরে রহিমার স্বামী ও তার স্বজনদের ব্যাংক হিসাবে মিলেছে আরও ৯ কোটি টাকা।
জানা যায়, রহিমা বেগম খুনের মামলার অভিযুক্ত আসামি। এ মামলায় জামিন নিয়ে ৫ বছর ধরে গা ঢাকা দিয়ে আছেন তিনি। আজ এখানে, কাল ওখানে- এভাবেই পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আছেন তিনি। তার নামে ঢাকায় মাদকের এক ডজনের বেশি মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। রহিমার নামে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মাহমুদনগরে ৭ তলা বাড়ি রয়েছে। এছাড়া ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে আরও কয়েক কাঠা জমির খোঁজ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় রহিমার বিরুদ্ধে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওয়ারী থানায় অর্থ পাচার আইনে মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন : গুম ছাত্রদল কর্মীর হদিস ১২ বছর পর, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হয়রানির দায় নেবে কে?

মামলার বাদী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আলী আসলাম হোসেন সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, মাদক ব্যবসা করে রহিমা বেগম ও তার স্বামীর অপরাধলব্ধ আয় নিয়ে আমরা অনুসন্ধান করি। সেই অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদক ব্যবসা করেই তারা বাড়ি, জমিসহ স্থাবর–অস্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন।
তবে মামলা হওয়ার চার মাস পার হলেও রহিমা খোঁজ কেউ দিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. বাহাউদ্দিন। তিনি বলেন, রহিমা ও তার স্বজনদের ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা ২১ কোটি টাকা, ৭ তলা বাড়ি, জমিসহ সম্পদ যাতে স্থানান্তর বা রূপান্তর না হয়, সে জন্য আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করা হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের করা মামলার তথ্যানুযায়ী, রহিমা বেগমের ৩টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। ১৪ বছর আগে (২০০৮ সাল) দুটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। আরেকটি হিসাব খোলা হয় ২০১৭ সালে। এই ৩টি ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা হয় ১২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এছাড়া রহিমার স্বামী হযরত আলীর নামে দুটি ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে। ১০ বছর আগে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। অন্যটি খোলা হয় ৪ বছর আগে। এই ৩টি ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে ৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এবং রহিমা–হযরত আলী দম্পতির দুই ছেলের ব্যাংক হিসাবে ২ কোটি ৭ লাখ টাকা জমার তথ্য মিলেছে।
আরও পড়ুন : জঙ্গি ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযানে বিএনপির আপত্তি কেন?
জানা যায়, বিএনপির মিছিলে, জনসভায় লোক সাপ্লাইয়ের কাজ এবং মাদক ব্যবসা করে তারা এই সম্পদের মালিক হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের বাড়িটি রহিমার নামে। সবুজবাগের মেরাদিয়া মৌজায় রহিমার সাড়ে ৩ কাঠা জমি রয়েছে। এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জে রহিমার নামে আরও জমি রয়েছে।
রহিমার বিরুদ্ধে গেন্ডারিয়া থানায় ৮টি মাদকের মামলা, যাত্রাবাড়ী থানায় ৩টি এবং রামপুরা থানায় ১টি মাদকের মামলা রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তার বিরুদ্ধে এই মামলা করে পুলিশ। প্রতিটি মামলায় রহিমাকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। মামলাগুলো ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন। এছাড়া রহিমার স্বামী হযরত আলীর বিরুদ্ধে গেন্ডারিয়া থানায় ৬টি ও যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর ও ডেমরা থানায় ১টি করে মাদকের মামলা রয়েছে।
[বিএনপির সভায় লোক সাপ্লায়ার বস্তির রানী রহিমা মাদক বেচে ২১ কোটি টাকা, ৭ তলা বাড়ির মালিক!]
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, রহিমা ও তার স্বামী হযরত আলী তালিকাভুক্ত আসামি। রহিমা মূলত গেন্ডারিয়া এলাকায় মাদক ব্যবসা করতেন। আলী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
আরও পড়ুন : বিএনপি শাসনামলের মক্ষীরানি বেবি নাজনীন, শামা ও নিশো
এছাড়া রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ২০১৪ সালের ৮ই নভেম্বর আসলাম শিকদার নামের এক ব্যক্তিকে খুনের দায়ে রহিমাকে প্রধান আসামি করে ঢাকার আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। আসলাম শিকদার খুনের মামলায় ২০২০ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি রহিমাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। রহিমা গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। তবে ২০২১ সাল থেকে তিনি পলাতক। রহিমার বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, আমরাও মাদক ব্যবসায়ী রহিমাকে খুঁজছি। যেখানেই তাকে পাওয়া যাবে, গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হবে।
আরও পড়ুন :