অনুসন্ধান: কানাডায় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার রাজকীয় জীবন-যাপন

0
542
অনুসন্ধান-খালেদা-জিয়া

দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি খাতায় তিনি ফেরারী হিসেবে তালিকাভুক্ত। মাথার ওপর ঝুলছে ১৩ বছরের সাজা। কোথাও তার নিশ্চিত খোঁজ মিলছিল না, ভাসা ভাসা কিছু তথ্য কানে আসছিল শুধু। হঠাৎ প্রবাস থেকে নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তথ্যদাতার মারফত দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এলো তার সম্পর্কে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। এরপর বিস্তারিত অনুসন্ধানে জানা গেল কানাডায় তার রাজকীয় জীবনের খোঁজ-খবর। বিশাল বাংলো বাড়ি করেছেন ভ্যাঙ্কুভারে। বিশ্বের অন্যতম এই ব্যয়বহুল শহরের পয়েন্ট গ্রে রোডের একটি বিলাসবহুল ভিলারও মালিক তিনি। বিস্তীর্ণ জমিসহ বিশাল এস্টেট গড়েছেন সেখানে।

আরও পড়ুন : জিয়া-খালেদার ছবিযুক্ত ব্যানার টেনে ছিঁড়লো ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা (ভিডিও)

বিশদ খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেই এস্টেটে তিনি থাকেন না, কানাডিয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত কর্মচারীরা সেই এস্টেটের দেখভাল করেন। তিনি মাঝে মাঝে আসেন, বড়সড় পার্টি দেন, রমরমা উৎসব চলে সেখানে। কানাডিয় অনেক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং দলীয় ঘনিষ্ঠ লোকজন সেখানে জমায়েত হন। এমনকি কানাডায় আশ্রিত বঙ্গবন্ধুর খুনি নুর চৌধুরীকেও সেখানে দেখেছেন অনেকেই।

তার স্ত্রী ইমতিয়াজ বেগমের নামে বেলমন্ট এভে আছে আারেকটি বিলাসবহুল বাড়ি। টরেন্টোতে মেয়ে জেরিন তাসনিমের নামে রয়েছে একটি স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট। ছোট মেয়ে ফাতিমা তাসনিমের নামে একটি বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট আছে লন্ডনে। আর এখানেই সেই ❛ফেরারি❜ ব্যক্তি প্রকাশ্যে বসবাস করেন। বাঙালি এবং পাকিস্থানি কমিউনিটিতে তিনি এক পরিচিত মুখ। কানাডায় ইমিগ্রান্ট হওয়ার সুবাদে নিয়মিত যুক্তরাজ্য-কানাডা যাতায়াত করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের দেখভাল করেন। কানাডিয়ান নাগরিকত্ব এবং পাসপোর্ট তাকে সুরক্ষা বলয়ে ঢেকে রেখেছে।

আরও পড়ুন : পাকিস্তান, কুয়েত ও সৌদি ৩০০ কোটি টাকা দিয়েছিলো বিএনপিকে: জিজ্ঞাসাবাদে বাবর – টাকা রাখার জন্য জিম্মাদার খোঁজেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া

এতক্ষণ যার কথা বলা হচ্ছিল, তিনি হলেন বিএনপি চেয়ারপারস খালেদা জিয়ার সাবেক অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার ডা. ফিরোজ মাহমুদ ইকবাল।

ডা. ফিরোজ মাহমুদ ইকবালবিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের এই কর্মকর্তা আলোচনায় আসেন ২০০১ সালে। খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলে ডা. ফিরোজ প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এরপর শুরু হয় তার দাপট। সেসময় হাওয়া ভবনের সাথে মিলে কমিশন বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য এবং টেন্ডার বাণিজ্যে মনোযোগী হন ফিরোজ। স্বাস্থ্যখাতের বারোটা বাজিয়ে ছেড়ে দেয়ার পেছনে জড়িত সিন্ডিকেটে তিনিও ছিলেন। অল্পদিনেই শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। সেই সাথে বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ চ্যানেলে পাচার করেছেন বড় অঙ্কের অর্থ। গড়ে তুলেছেন বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্টসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ।

২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকার এলে পালিয়ে যান ফিরোজ। অনুপস্থিত থাকায় ৩টি মামলায় দণ্ডিত হন খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন এই সরকারী কর্মকর্তা। রমনা থানায় মামলা নং- ৪ (তারিখ : ০৫-০৮-২০০৭) এ তার ৩ বছরের কারাদণ্ড হয়। তেজগাঁও থানার মামলা নং- ২৩ (তারিখ : ১৩-১১-২০০৭) এ তার ৫ বছরের কারাদণ্ড হয়। এছাড়াও রমনা থানায় আরও একটি মামলায় তার ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

আরও পড়ুন : দুবাইতে ক্রোক হচ্ছে খালেদার ১৩২ মিলিয়ন ডলারের জমি!

রেসিডেনশিয়াল পারমিট কানাডাঅনুসন্ধানে দেখা যায় ডা. ফিরোজ সর্বশেষ Z-0069349 পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন, যার মেয়াদ ২০০৯ সালেই শেষ হয়ে যায়। এরপর সেটি আর নবায়ন করা হয়নি। যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ২০০৯ সালের আগেই ডা. ফিরোজ মাহমুদ ইকবাল কানাডায় স্থায়ী হওয়ার কাজটি সম্পন্ন করে ফেলেছেন। সেখানে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় নেননি। কানাডা সরকারের কয়েকটি প্রকল্পে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করার বিনিময়ে আর.পি (রেসিডেনশিয়াল পারমিট) বাগিয়ে নিয়েছেন। পরবর্তীতে কয়েক বছরের মধ্যে তিনি সপরিবারে কানাডার নাগরিকত্ব পেয়ে যান।

অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, বাড়ি ছাড়াও ৩টি দেশে তার কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। লন্ডনে রয়েছে তার ২টি রেস্তোরাঁ। ম্যানচেস্টারের রয়েছে একটি আবাসিক হোটেল। ডা. ফিরোজ এখনও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। ফেসবুকে তার নামে একটি পেজ রয়েছে, সেখানে তিনি নিয়মিত বিএনপির কার্যক্রম সম্পর্কে আপডেট দেন। দুর্নীতির বরপুত্র মি. টেন পার্সেন্ট খ্যাত তারেক রহমানের অন্যতম সহযোগী হিসেবে এখনও বিএনপিতে তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

[অনুসন্ধান: কানাডায় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার রাজকীয় জীবন-যাপন]

অর্থপাচার নিয়ে লম্বা গলায় লেকচার দেওয়া বিএনপি নেতৃবৃন্দ এবং দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ কেন খালেদা জিয়ার সাবেক অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার ডা. ফিরোজ মাহমুদ ইকবালের অর্থপাচার ও স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির সম্পর্কে নীরবতা পালন করেন, এই প্রশ্ন করলে কি তাদের লজ্জা দেওয়া হবে? জবাব দেওয়ার ভার রইল দেশের সাধারণ মানুষের ওপর।

আরও পড়ুন :

মতামত দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে