বেশিদিন আগের কথা নয়, আফগানিস্তানের হামিদ কারজাইয়ের কথা মনে আছে নিশ্চয় সবার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষিত এবং সেখানে অধ্যাপনার চাকরি ছেড়ে আফগানিস্তানে এসেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছা অনুযায়ী। পরে মার্কিন কর্মকর্তাদের হাতের পুতুল হিসেবে আফগানিস্তানে কাজ করেছেন মার্কিন এজেন্ট হিসেবে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পালিয়ে যান, ক্ষমতা তুলে দিয়েছিলেন তালেবানদের হাতে। মাঝখানের সময়টুকুতে আফগানিস্তানকে চুষে নিংড়ে নিঃস্বই করেননি শুধু, নিজের ধন-সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
আফগানিস্তানের দায়িত্ব গ্রহণের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিনি আফগানিস্তানের একজন সুধীজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রাজনীতি করতেন না। তাকে টোপ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিহত করার জন্য। আর সেজন্য আফগানিস্তানে যখন সোভিয়েতরা কর্তৃত্ব করছিল, ঠিক সেই সময় হামিদ কারজাইকে নিজেদের হাতের পুতুল হিসেবে তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে একজন সরব রাজনীতিবিদ দেখা যাচ্ছে, যার নাম রেজা কিবরিয়া। তিনি পরিচিতি পেয়েছেন ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ শাহ এএমএস কিবরিয়ার পুত্র হিসেবে। কিবরিয়া ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক এবং ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এই নেতা ১৯৯৬ সালের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে দ্বিতীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আওয়ামী লীগ ৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এলে শাহ এএমএস কিবরিয়া অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে যে হত্যা, তাণ্ডব এবং নারকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, সেই নৃশংসতার এক পর্যায়ে শাহ এএমএস কিবরিয়ার ওপর বৈদ্যের বাজারে এক জনসভায় গ্রেনেড হামলা হামলা করা হয়।
ওই হামলায় তিনি গুরুতর আহত হলে তাকে একটি বেসামরিক হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসার চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সেই অনুমতি দেয়নি। পরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে আসার পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ঢাকা বারডেম হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনি মারা যান।
তার মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ সরকার আন্দোলন করেছিল। বিএনপি-জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এই হত্যার জন্য সরাসরি দায়ী ছিল, যা পরবর্তীতে তদন্তে উঠে আসে।
কিন্তু শাহ এএমএস কিবরিয়ার পুত্র রেজা কিবরিয়া পিতার আদর্শের বিপরীতে গিয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি বিতর্কিত নুরুকে নিয়ে এক নতুন রাজনৈতিক দল করেছেন। শুধু রাজনৈতিক দল করেই ক্ষান্ত হননি, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, সেনাবাহিনীকে উসকে দিচ্ছেন, সেনাবাহিনীতে বিভক্তি সৃষ্টির কথা বলছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি উসকে দেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী হল সার্বভৌমত্ব এবং ঐক্যের প্রতীক। সে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি একটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ। সেই অপরাধ করার পরও সেটিকে তিনি জায়েজ করার চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুনঃ ড. রেজা কিবরিয়া: র্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় আমেরিকার প্রতি ‘প্লিজড’ গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক
বিভিন্ন ফোরামে তিনি ইংরেজিতে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং এর কারণ তিনি বলছেন, আন্তর্জাতিক কমিউনিটিকে তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে জানানোর জন্য এটি করছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্যকে উসকে দিচ্ছেন।
তিনি এটাও বলেছেন, “সামনে আরও নিষেধাজ্ঞা আছে”, এ তথ্য তিনি কোথায় পেলেন? এরকম প্রশ্নের উত্তরে রেজা কিবরিয়া বলছেন, তিনি দীর্ঘদিন আইএমএফে চাকরি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তার অনেক বন্ধু-বান্ধব আছে যাদের মাধ্যমে তিনি জেনেছেন।
আর এ সমস্ত বক্তব্য থেকে অনেকেই মনে করছেন, ড. ইউনূসকে দিয়ে এক্সপেরিমেন্টে ব্যর্থ হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়ত এখন রেজা কিবরিয়ার ওপর ভর করেছে।
রেজা কিবরিয়া কি আরেক হামিদ কারজাই হতে চান এবং পরে নূরুর মত তালেবানপ্রেমিদের হাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা দিয়ে বিপুল অর্থ-লুটপাট করে বিদেশে পাড়ি জমাতে চান?
[আরেক হামিদ কারজাই হতে চান মার্কিন পুতুল রেজা কিবরিয়া?]
কারণ রেজা কিবরিয়া বিবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর তার প্রিয় জায়গা। সেখানে থাকতে তার ভালো লাগে। তাহলে কি এখন অঢেল অর্থ সংকুলানের মিশনে আছেন রেজা কিবরিয়া?
এই প্রশ্নগুলো রাজনৈতিক অঙ্গনে এসেছে। কারণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রগুলো চলছে, তার দৃশ্যমান রূপ হলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানো ইত্যাদি।
আর এসবের পেছনে যে বাংলাদেশের অনেকের হাতে রয়েছে তা রেজা কিবরিয়া বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়। তাছাড়া ইতিমধ্যে মার্কিন কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকসও এক বক্তব্য বলেছেন, বাংলাদেশের একটি পক্ষ ক্রমাগত জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে।
তবে কি এই উপসংহারে পৌঁছানো যায় যে, রেজা কিবরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পুতুল। তিনি কি বাংলাদেশের হামিদ কারজাই হতে চান, এই প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দুটো প্যাটার্নে ব্যাপক মিল পাওয়া যাচ্ছে বলে মত কূটনীতিকদের।
আরও পড়ুনঃ অকপটে নিজেকে আমেরিকার দালাল বলে স্বীকারোক্তি রেজা কিবরিয়ার (ভিডিও)