পুরনো বাংলা প্রবাদ- সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। অর্থাৎ, কেউ যদি একটু শান্তিতে থাকতে চায়, শান্তি বিনষ্টের কিছু কারণ তৈরি হয়। বাংলাদেশ যখন স্থিতিশীল অবস্থায় চলতে থাকে, বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে সুবাতাস বইতে থাকে, তখন বিএনপি-জামায়াতসহ দেশবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে। চেষ্টা করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুর মধ্যে দেশে জ্বালানী সাশ্রয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের গৃহীত পরিকল্পনাগুলো স্বভাবতই কিছুটা চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল সাধারণ মানুষকে। এই সুযোগকে কাজে লাগায় রাজনৈতিক অপশক্তিগুলো। নানাভাবে গণমাধ্যমে বাগাড়ম্বর করে দেশের মানুষের মাঝে বিশৃঙ্খলা তৈরির একটা চেষ্টা করে। রাজনৈতিক দলগুলোর এমন অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল জনমানসে একটু স্ফুলিঙ্গ তৈরি করা, যেন অসন্তুষের আগুন জ্বলে ওঠে।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দেশ মিয়ানমার বরাবরই বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উস্কানি দিয়ে থাকে। নিজ দেশের ১২ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে ধাওয়া দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছিল। যদিও এজন্য আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত মিয়ানমারকে টেনে নিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রচন্ড চাপের মুখে আছে মিয়ানমার। ফলে রোহিঙ্গা নাগরিকরা যেন আর নিজ দেশে ফিরে যেতে না পারে, সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জান্তা সরকার। এমনিতেই সেখানে আভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা সবই লাটে উঠেছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হামলায় প্রতিদিন বহু সরকারি সৈন্য হতাহত হচ্ছে। ভয়ে এবং আটক হয়ে অনেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীতে ভিড়ছে। বস্তুত রাখাইন অঞ্চল জনশূন্য করে যে সুবৃহৎ পরিকল্পনা নিয়েছিল মিয়ানমার, তা ফসকে যেতে বসেছে।
তাই তারা এখন অশান্তি ছড়িয়ে এই অঞ্চলকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ঠেলে দিতে চায়। প্রায়শ নাফ নদীর আশপাশে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বাংলাদেশকে উস্কানি দেওয়ার মত বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। বাংলাদেশ যেন তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে সামরিক শক্তি দেখায়। এতে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে বাংলাদেশের ওপর হামলে পড়ে দখলের চেষ্টা করা যাবে, না পারলে অন্তত বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দেওয়া যাবে। বাংলাদেশের হাতে থাকা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের দখল নিয়ে নিতে পারবে মিয়ানমার। গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পে এগিয়ে যেতে পারলেই পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ। মূলত সামরিক জান্তার ভাবনাটা এমনই।
লক্ষ্যণীয়, মিয়ানমারের উদ্দেশ্য এবং বাংলাদেশে সক্রিয় দেশবিরোধীদের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ এক। উভয়পক্ষই চায় বাংলাদেশের পতন। সুযোগ বুঝে ক্রমাগত উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠী। মিয়ানমার থেকে অবিস্ফোরিত মর্টার শেল বাংলাদেশে এসে পড়ায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল বাংলাদেশি জনগণের মনে। উত্তেজনার পারদ চড়িয়ে দিতে ফখরুল মন্তব্য করেছেন, এদিকে শেল পড়লে ওদিকেও ছুড়তে হবে। অর্থাৎ, মিয়ানমারের পাতা ফাঁদে পা দিতে দেশের মানুষকে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছেন ফখরুল গং।
[মিয়ানমারের পাতা ফাঁদে পা দিতে ফখরুলদের উস্কানি, কী চায় দেশবিরোধীরা?]
দেশবিরোধী এই রাজনীতিবিদরা ভালো করেই জানেন, বাংলাদেশের মত একটি রাষ্ট্রের এক সপ্তাহের যুদ্ধের ব্যয় বাৎসরিক বাজেটকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। মিসাইল দূরে থাক, সামান্য একটি বুলেট, কিংবা একটি মর্টার শেলেরও যে দাম, একঘণ্টা ফ্লাই করলে একটি যুদ্ধ বিমানের যে জ্বালানী খরচ- কাগজে-কলমে হিসেব করলে অর্থনীতিবিদরা বুঝতে পারবেন, সাধারণ জনগণের ওপর যুদ্ধের প্রভাব কতটা তীব্র হয়ে উঠতে পারে।
কোনোভাবে একটা যুদ্ধ লাগিয়ে সেটাকে এক সপ্তাহ টেনে নিতে পারলেই বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব পড়বে। থমকে যাবে, উৎপাদন, ব্যাহত হবে রপ্তানি। বাতিল হবে বিভিন্ন কার্যাদেশ। জের টানতে গিয়ে জনগণের ওপর চাপবে করের বোঝা, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ব্যাহত হবে, দ্রব্যমূল্য আকাশে গিয়ে ঠেকবে, ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে নিম্নবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্তরাই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
পেশাদার রাজনীতিবিদদের তো নাওয়া-খাওয়ার চিন্তা নেই। ক্ষমতায় না থাকলেও দিবারাত্রি রাজপথে কাটানো রাজনীতিবিদদের গাড়ি-বাড়ি, খোরাকি সবই বহাল তবিয়তে চলছে। চাকচিক্যময় পোশাক-আশাক, তারকা হোটেলে পার্টি দেওয়া- কিছুরই কমতি নাই। দৃশ্যমান আয়ের উৎস না থাকলেও তাদের বিলাসবহুল জীবন-যাপন চলছে সমানতালে। দেশে যুদ্ধ লাগলে রাতারাতি তারা দেশের বাইরে গিয়ে আশ্রয় নেবেন। কিন্তু তাদের উস্কানির বলি হবেন সাধারণ মানুষ। সেই চিন্তাটা তাদের নাই। যুদ্ধ লাগাতে পারলে এই সরকার চাপে পড়বে, এটাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। নিজেরা তো কোনোভাবেই ক্ষমতায় যাওয়ার মত উপযুক্ত অবস্থায় নেই, তাই দেশটাকে ধ্বংস করে দিতে পারলেই মনের বাসনা পূর্ণ হবে তাদের।
মিয়ানমারের উস্কানি বিষয়ে সাধারণ মানুষের মনে কিছু প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন, মিয়ানমারকে কি জবাব দেওয়া হবে না? মিয়ানমার কেন নিজেদেরকে ঝুঁকিতে ফেলে বাংলাদেশের সাথে বিবাদ করতে চায়? বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের সামরিক সক্ষমতার ব্যবধান কেমন? আসুন উত্তর খোঁজা যাক।
‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়’- বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত এই পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলে বাংলাদেশ। তবে শান্তিতে থাকতে চাইলেও মাসল পাওয়ার জরুরি। তবে এমন নয় যে, কথায় কথায় শক্তি প্রদর্শন করতে হবে। তবে এটুকু অন্তত বুঝিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, কেউ যদি ঝামেলা চায়, তবে সে সত্যিকার অর্থেই উচিৎ শিক্ষাটা পাবে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চাইলে বাংলাদেশের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। কারণ, অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের পথ অনুসরণ করে বাংলাদেশের সামরিক শক্তির বিকাশ ততটা হয়নি। এটা স্বীকার করতেই হবে, সামরিক সক্ষমতার বিচারে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের ভারসাম্যে ঘাটতি রয়েছে। আন্তর্জাতিক সামরিক বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থার ডাটাও সেটাই বলছে।
সম্প্রতি মিয়ানমারের জান্তার উদ্ধত আচরণ লক্ষ্যণীয়। মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধে জড়ানো বা তাদের উস্কানির ফাঁদে পা দিলে ক্ষতিটা বাংলাদেশের বেশি। সেই তুলনায় তাদের হারাবার কিছু নেই। কারণ, মিয়ানমার সামরিক দিক দিয়ে যতটা অগ্রসর, স্থিতিশীল অর্থনীতির দিক দিয়ে ততটা উল্লেখযোগ্য কোনো দেশ নয়। রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে এমনিতেই তাদেরকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দেশ বলা চলে। তাছাড়া তাদের চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের মত এমন বড় শহর নেই, অর্থনীতিও সবল নয়। একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হবে। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগের অর্থনীতির আকার সমগ্র মিয়ানমার থেকেও বেশি।
[মিয়ানমারের পাতা ফাঁদে পা দিতে ফখরুলদের উস্কানি, কী চায় দেশবিরোধীরা?]
সবচেয়ে বড় কথা হলো, মিয়ানমারের জনজীবন বিপর্যস্ত হলে বা দেশবাসী মরে সাফ হয়ে গেলেও সামরিক জান্তা সরকারের তাতে কিছুই আসে-যায় না। কিন্তু তাদের উস্কানিতে পড়লে, শুধুমাত্র ইগোর কারণে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে গেলে আফটার ইফেক্ট বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি। একটা অগোছালো ঘরকে নতুন করে এলোমেলো করার কিছু নাই। কিন্তু একটা সাজানো বাগানে উন্মত্ত ষাঁড় ছেড়ে দিলে সেই বাগান একটা ন্যাড়া ক্ষেতে পরিণত হবে। মিয়ানমার আয়তনে অনেক বড়। জনঘনত্বও কম। সেই তুলনায় ছোট এবং বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশর প্রতিটি নাগরিকই ক্ষতিগ্রস্ত হবে যদি যুদ্ধ লাগে।
তাহলে উপায় কী? সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মাসল পাওয়ার যথাযথভাবে প্রদর্শন করতেই হবে, শান্তির স্বার্থে হলেও। বাংলাদেশের সামনে মিয়ানমারের বড়াই করার বড় জায়গা হলো সামরিক শক্তি এবং বিশাল সৈন্যবাহিনী। দেশটি তাদের বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিল্পখাতে বরাদ্দ রাখুক আর না রাখুক সামরিক খাতে ইচ্ছামত ব্যয় করে। যেহেতু ক্ষমতায় সামরিক বাহিনী, স্বভাবতই তারা সবসময় অনিরাপদ বোধ করে। যার ফলে মাসল পাওয়ার বাড়ানোর দিকে বেশি সচেষ্ট থাকে। ঠিক যেন পাকিস্তান-২। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সীমিত সামর্থের পূর্ণ ব্যবহার করে বাংলাদেশ। অগ্রাধিকার পায় জনকল্যাণ। সামরিক দিক থেকেও বাংলাদেশে অন্যান্য খাতে বাজেট বেশি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ফার্স্ট প্রায়োরিটি। সামরিক খাতে ইচ্ছামত খরচ বা বাজেট বরাদ্দ করে না। সেটা উচিতও নয়। এতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তকে নেমে যেতে হবে চরম দারিদ্রের দিকে।
একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরুন, আপনার সম্ভাবনাময় একখণ্ড জমি আছে। আর টাকা আছে ২০ লাখ। আপনার তখন দুটি অপশন রয়েছে। প্রথমত, সম্পদের নিরাপত্তায় আপনি ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে উঁচু দেয়াল তুলে দিতে পারেন, সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে পারেন, শক্তিশালী গেট বানাতে পারেন। অথবা, আপনি জমিতে প্রথমে একটি দোকান করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এরপর আপনার ব্যাবসার লাভ ও পরিসর বাড়লে লাভের অংশ থেকে ধাপে ধাপে আপনি জমির চারদিকে দেয়াল, সিসিটিভি ক্যামেরাসহ নিরাপত্তা সরঞ্জাম সংযোজন করতে পারেন। কোনটা বেশি জরুরি?
প্রথম অপশনে আয়ের সুযোগ সীমিত হলেও ভবিষ্যতে আরও নিরাপত্তার জন্য সক্ষমতা কমে যাবে। কিন্তু আপনি বর্তমানে বেশ সুরক্ষিত থাকবেন। দ্বিতীয় অপশনে আপনার সম্পদ বা পুঁজিতে টান পড়ার সুযোগ নেই। লাভ বাড়িয়ে পুঁজি সুরক্ষিত করতে পারলে আপনি আরও উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংযোজন করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে খুব বেশি চাপও নিতে হবে না। যেহেতু আপনার ব্যবসায় নিয়মিত লাভ হচ্ছে, পুঁজিও সুরক্ষিত।
মিয়ানমার প্রথম অপশনটি বেছে নিয়েছে। সম্পদের প্রাচুর্য থাকলেও তা কাজে লাগানোর মত স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নেই তাদের। সেই সাথে জনকল্যাণমুখী এবং দূরদর্শী উদ্যমী নেতাও নেই যে, দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। করতে পারলে মিয়ানমারের অর্থনীতি বাংলাদেশের কয়েকগুণ বেশি বড় হতো। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে দমনের পেছনেই তাদের রাষ্ট্রচিন্তা আবর্তিত হয়। ফলে জনকল্যাণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের চেয়ে সামরিক বাজেটের প্রায় পুরোটা ঢেলে না দিয়ে উপায় নেই। তাদের রাষ্ট্রীয় উৎপাদন এবং আয়ের সুযোগও সীমিত। অপরদিকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় প্রক্রিয়াটিই প্রযোয্য। সেভাবেই চলছে বাংলাদেশ। সামরিক সক্ষমতা অর্জনের চেয়ে অর্থনৈতিক দৃঢ়তা এবং সাবলম্বী হওয়ার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
[মিয়ানমারের পাতা ফাঁদে পা দিতে ফখরুলদের উস্কানি, কী চায় দেশবিরোধীরা?]
এখানে উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সামরিক বাজেট বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির কলেবর বৃদ্ধি পাওয়ায় শতাংশের হিসাবে জিডিপির মাত্র ১.৫% সামরিক খাতে বরাদ্দ করলেও তা মিয়ানমারর জিডিপির ৮-১০% বিনিয়োগের চেয়েও বেশি হয়ে যায়। বিগত কয়েক বছর ধরেই এটা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত নীরবে সামরিক খাতে ব্যয় অনেকখানি বাড়িয়েছে। তবে আসল কথা হলো, গুরুত্বপূর্ণ ডিটারেন্স সৃষ্টির বিকল্প নেই। শক্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের পার্থক্য বিদ্যমান। এখন কিছুটা হলেও ভারসাম্য বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের জন্য। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে সামরিক প্রকিউরমেন্টে স্মার্ট ওয়েপন এবং স্ট্র্যাটেজিক ওয়েপন যুক্ত করা।
এক্ষেত্রে বিলিয়ন ডলারের যুদ্ধবিমানের চেয়েও কস্ট ইফেক্টিভ হলো ড্রোন (Drone)। রিকনিসেন্স মিশনের (Reconnaissance Mission) পাশাপাশি নির্দিষ্ট টার্গেটে প্রিসিশন অ্যাটাক (Precision Attack) করাও যায়, অপারেটিভ কস্ট অনেক কম। প্রশিক্ষিত পাইলটের জীবনের ঝুঁকিও থাকে না। যদি উচ্চ প্রযুক্তির ড্রোন, জিএমএলআরএস (GMLRS) সংগ্রহ করা যায় তবে ভালো একটা ডিটারেন্স তৈরি করা সম্ভব। মিয়ানমারের চেয়ে অনেকখানি এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। অযাচিত উস্কানিরও জবাব দেওয়া সম্ভব হবে। ডিফেন্সিভ ওয়েপন হিসাবে আকাশ প্রতিরক্ষায় গুরুত্ব দেয়া উচিত বাংলাদেশের। লাস্ট লাইন অব ডিফেন্স হিসাবে বাংলাদেশের সংগ্রহে আছে অরলিকন জিডিএফ-০০৯ (Oerlikon GDF-009)। মিয়ানমার চাইলেও যা সংগ্রহ করতে পারবে না। স্ট্র্যাটেজিক্যালি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নৌবাহিনী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এদিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে। চাইলে আরও সামরিক সরঞ্জাম যুক্ত করা যায়।
আশার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশ নিজেদের সক্ষমতার বিচারে প্রতিরক্ষার দিক দিয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ করছে। সম্প্রতি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমরাস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ, কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর বিভিন্ন সমরাস্ত্র কেনার জন্য সামরিক বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ করছেন, নিয়মিত সেসব দেশে গিয়ে এ বিষয়ে আলাপও করছেন। যা আন্তর্জাতিক অনেক সামরিক বিষয়ক সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারও হচ্ছে। উন্নত সমরাস্ত্র যুক্ত হলে এই অঞ্চলে ভারসাম্য নিশ্চিত করা সম্ভব। এতে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতাও অক্ষুণ্ন থাকবে।
তবে সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো জনগণ যেন ছোটখাট বিষয়ে প্যানিকড না হয়। যা করার চেষ্টা চালাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত দেশের মানুষের সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলছে। মিয়ানমারের ফাঁদে পা দিয়ে নিজ দেশের ক্ষতি করার ক্ষেত্রে ক্রমাগত উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মির্জা ফখরুল গংয়ের বিরুদ্ধেও সতর্ক হওয়া জরুরি। অতীতে যেমন বিএনপি-জামায়াত, হেফাজত ও চর্মনাই পীরদের উস্কানিতে সরকার সীমান্ত খুলে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, তেমনি আবারও ফাঁদে পা দিলে দেশের যে ক্ষতি হবে, তা বলাই বাহুল্য। দেশবিরোধী চক্রগুলো সেটাই চাইছে মনেপ্রাণে।
আরও পড়ুনঃ