
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভোল বদল এবং নয়া ভিসানীতি প্রণয়ণের পর বিগত কয়েক বছর যাবৎ বিএনপির যে লাফঝাঁপ দেখা গিয়েছিল, সব বন্ধ হয়ে গেছে। এতদিন তাদের যে পরিকল্পনা ছিল সরকারকে চাপে ফেলে নিজেদের খেয়াল খুশিমত নির্বাচনে বাধ্য করার, সেই পরিকল্পনা মার্কিনিদের শর্তেই বাতিল করতে হচ্ছে এখন বিএনপিকে। দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধানকে সমুন্নত রেখে নির্বাচন প্রত্যাশা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যা তারা স্পষ্টই বলেছে।
এছাড়াও নির্বাচন বানচালে কিংবা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যদি সহিংসতা ঘটানোর চেষ্টা করে কেউ, মার্কিন প্রশাসন তাদেরকে সেদেশে প্রবেশের সুযোগ দেবে না। আর মার্কিনিরা যে নীতি প্রণয়ন করে, ইউরোপ এবং আমেরিকার বিভিন্ন দেশ তাদের মত একই নীতি অনুসরণ করবে। তাই বলাই বাহুল্য বিএনপি এখন প্রচুর চাপে রয়েছে। পাশাপাশি তাদেরকে এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবতে হচ্ছে নতুন করে। কারণ মার্কিন প্রশাসন ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, কোনো দল নির্বাচনে এলো কি না- এ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা থাকবে না।
ফলশ্রুতিতে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। লন্ডন থেকে পাঠানো এক বার্তায় সেখানে অবস্থানরত বিএনপির পলাতক নেতা তারেক রহমান জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এ নিয়ে দলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ডিঙিয়ে তৃণমূলের আস্থাভাজন নেতাদের কাছে সরাসরি এমন নির্দেশ দেয়ায় মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন কেউ কেউ, এমনটাই শোনা যাচ্ছে। এমন নির্দেশনার পর কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ বিভিন্ন অজুহাতে দলীয় কর্মসূচিতে বিরতি নিয়েছেন। কয়েকজন অসুস্থতার ভান করে হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন- সূত্র তেমনটি জানিয়েছে।
বলা হচ্ছে, প্রতিটি জেলায় সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছে তারেক খুদে বার্তা পাঠিয়ে বলেছেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। আগামী জুনের মধ্যে তার কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করে পাঠাতে হবে। তবে এখানে আরেকটি পক্ষ দাবি করছে, এটা তারেকের মনোনয়ন বাণিজ্যের প্রস্তুতি হতে পারে।
[বাংলাদেশ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দেখে দলের নেতাদের নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশ তারেকের!]
সূত্র বলছে, বিএনপিপন্থী সাংবাদিকদের একটি সংগঠন এবং একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে তারেক রহমান নির্বাচনের ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে জরিপ চালাচ্ছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে খোদ বিএনপির ভেতরেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে যাচ্ছে বিএনপি? এই প্রশ্নের জবাবে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য মিলছে। স্থায়ী কমিটির এক তারেকপন্থী সদস্য বলছেন, আমরা কখনই বলিনি যে আমরা নির্বাচনে যাব না। আমরা নির্বাচনে যাব এবং সেজন্য প্রস্তুত। যেহেতু আমরা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছি, তাই আমাদের যে প্রস্তুতি- তারই অংশ হিসেবেই প্রার্থী তালিকা করছি। নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং আমাদের দাবির পক্ষে আন্দোলন, দুটোই পাশাপাশি চলবে।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, নয়া ভিসানীতির ফলে এটা স্পষ্ট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় বিএনপি অংশগ্রহণ করুক এবং বর্তমান সরকারের অধীনেই তা করুন। আর নির্বাচনের যদি বিএনপি অংশগ্রহণ না করে বা বাধা দেয়- তবে তা ভিসানীতির পরিপন্থী। এতে বিএনপির নেতৃবৃন্দ মার্কিন ভিসা বঞ্চিত তো হবেনই, পাশাপাশি সেখানে বিএনপি নেতাদের স্থাবর-অস্থাবর যত সম্পদ রয়েছে, সেটাও মার্কিন প্রশাসন কুক্ষিগত করতে পারে। যা তাদের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং অর্থ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর নীতিমালাতেই রয়েছে।
বিএনপির জন্য এসব নীতিমালা নতুন নয়। এর আগেও বিএনপির একাধিক নেতা মার্কিন ভিসা বঞ্চিত হয়েছিলেন নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার দায়ে এবং জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার জন্য। এছাড়া বিএনপির অনেক নেতার যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা রয়েছে, সেখানে বিএনপির অবস্থানও বেশ শক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশে বিএনপির কমিটি রয়েছে, নেতা-কর্মীর সংখ্যাও কম নয়। নির্বাচনী সহিংসতার অভিযোগ উঠলে এসব নেতা-কর্মীর ওপরেও তার প্রভাব পড়বে। তাই এবার বিএনপি নতুন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরাগভাজন হতে চায় না।
জানা গেছে, গত শুক্রবার এবং আজ বিএনপির বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের সিনিয়র নেতার কাছে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে লন্ডন থেকে। তাতে বলা হয়েছে, স্ব স্ব এলাকায় বিএনপির যেসব জনপ্রিয় নেতা আছেন, যারা আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হলে বিজয়ী হতে পারবেন, এলাকায় প্রভাব রয়েছে এবং দলের জন্য যারা গত ১৬ বছর ধরে কাজ করেছেন- তাদের তালিকা অবিলম্বে পাঠাতে হবে। আরও বলা হয়েছে, ৩০শে জুনের মধ্যে এই তালিকা যেন সুপ্রিম কমান্ডের (তারেক) হাতে পৌঁছে- তা নিশ্চিত করতে হবে।
[বাংলাদেশ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দেখে দলের নেতাদের নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশ তারেকের!]
বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দুই সহকারীর একজনও এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে সংবাদকর্মীদের জানান। তাদের সাথে কথায় জানা যায়, বিএনপিতে এমন অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, যা দলের শীর্ষ নেতারাও তাৎক্ষণিক জানতে পারেন না। তারেক রহমান হুটহাট একাই সিদ্ধান্ত নেন। এটিও হয়ত তেমন সিদ্ধান্ত। তবে বিএনপি নেতারা জেনেও এই নির্দেশনার কথা গোপন করছেন নাকি আদৌ তারা জানে না, সেটা স্পষ্ট নয়। তবে এটা পরিস্কার, নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে। তবে অংশগ্রহণের প্রক্রিয়া কী হবে তা বোঝা যাবে আরো কিছুদিন পর।
আরও পড়ুনঃ